ফ্রাঞ্জ ফাঁনো

ফ্রাঞ্জ ফাঁনো

মিনহাজুল ইসলামের প্রবন্ধ ‘ফ্রাঞ্জ ফাঁনো সমাচার’

প্রকাশিত : জুলাই ২১, ২০২০

ফাঁনোকে যারা জানে সবাই বলে, উনি কালোদের জন্য লিখেছেন। কথাটা আংশিক সত্য। কালোদেরকে মাইনোর করে তাদেরকে শোষণ করা অত্যাচার করার এবং তাদেরকে ট্যাগ করে ক্লাসিফাই করার পলিটিক্সের যে ট্রাডিশন, ফাঁনো অবশ্যই এটার বিরুদ্ধে লিখেছে। কিন্তু ফাঁনোর উদ্দেশ্য ও চিন্তা ওখানেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রথমত ফাঁনো একজন মনোচিকিৎসাবিদ ছিলেন। সেক্ষেত্রে মোটামুটি ফ্রয়েডিয়ান যে সাইকোএনালিসিস আছে তা সম্পর্কে তার জ্ঞান যথার্থ ছিল এবং লাকানিয়ান যে সাইকোএনালিসিস তা সম্পর্কেও। কিন্তু ফাঁনোর মূল উদ্দেশ্য ছিল কলোনিয়ালিজমের প্রকৃতি নির্ণয় করা এবং এটার যে উপাদানগুলো আছে ও এটা যে কনসিকোয়েন্সগুলা তা বিচার করা এবং তুলে ধরা। ফ্রয়েডের ইডিপাস কমপ্লেক্স নিয়ে লাকা বলেছেন, যে অঞ্চলে ভাষা আছে সেখানে ইডিপাস থাকবেই। কারণ ইডিপাসের ব্যাখ্যা কম বেশি জানি, বিশেষ করে লাকানিয়ান ইন্টারপ্রেটেশন। যেখানে পরিবারে পিতা প্রধান এবং এই পিতস সিম্বোলিক আকারে রাষ্ট্রের আইন, নৈতিকতা, নিষেধাজ্ঞান এগুলোকে প্রতিফলন করে।

কিন্তু ফানো ফ্রয়েড বা লাকার এই তত্ত্বকে এক ধরনের ক্রিটিক করে বলেছেন যে, উপনিবেশিত সমাজে বা দেশে ওই ফ্রয়েডিয়ান যে ইডিপাস কমপ্লেক্সের ফরমেশন তা থাকে না এবং লাকার যে ভাষা অর্থাৎ সিম্বোলিক যে ফরমেশন তা নাই। কারণ উপনিবেশিত সমাজে সেই পরিবার বা সেই সমাজ নাই, উপনিবেশিত সমাজে উপনিবেশিক যিনি সেই পিতার ভূমিকাতে থাকে। অর্থাৎ ফাঁনো লাকানিয়ান ইন্টারপ্রেটেশন টাই নিসেন কিন্তু লাকা পিতার যে সিম্বল উল্লেখ করসেন, ফাঁনোর মতে উপনিবেশিত সমাজে পিতা নাই, পিতা হলো খোদ উপনিবেশিক যে সে। অর্থাৎ ফাঁনোর মার্তিনিক যেটা ফ্রান্সের কলোনি ছিল সেই মার্তিনকের পিতা হলো ফ্রান্সের রাজা! অর্থাৎ মার্তিনিকের লোকেরা একটা অবজেক্টে পরিণত হইছে, তাদের কোনো আইডেন্টিটি নাই। লাকা ও ফাঁনোর সাথে একমত হইছেন যে, কলোনিয়াল সমাজে পরিবারের যে ইডিপাস অর্থাৎ পিতৃতন্ত্র সেটা খোদ পিতা নয়, সেই পিতা হলো ওই উপনিবেশিক রাষ্ট্র যেটা উপনিবেশ স্থাপন করেছে। অর্থাৎ ফ্রান্স ছিল বা ফ্রান্সের কালচার বা আইন, ফরাসি নৈতিকতা ছিল মার্তিনিকের সমাজের পিতা বা ইডিপাস ফরমেটের পিতা।

মার্তিনিক খোদ বস্তু, তারে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রান্স নিজেই। তো এইভাবে ফাঁনোর একটা বড় কন্ট্রিবিউশন হলো সে এমন এক চিন্তাপদ্ধতি দাঁড় করায়ছে, যে চিন্তাপদ্ধতিতে বড় বড় বিভিন্ন পপুলার টার্মকে আনলে সেগুলার অর্থ পাল্টায় যায়য। যেমন, মার্তিনিকের লোকেরা ফরাসি জানলেই তারা শিক্ষিত। অর্থাৎ শিক্ষিত হতে হলে ওদের ফরাসি জানতে হবে। মানে এই শিক্ষিত টার্মটার সাথে একটা কলোনিয়াল সেটআপ জড়িত। আমাদের দেশে যারা ইউরোপীয় প্রোফেশনাল টাইপ এডুকেশন নেয় তারা শিক্ষিত, যে এই এডুকেশন নেয় না তারা অশিক্ষিত। অর্থাৎ সেই কলোনিয়াল সেটআপটা লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষিত টার্মটার অর্থ পাল্টায় দিছে কলোনিয়ালিজম। যে লোক মাদরাসায় পড়ছে ধর্মশাস্ত্র এবং আরবি ভাষা পারে সে লোক আমাদের সমাজে শিক্ষিত না। কেন? কারণ আমাদের শিক্ষিত বলার মানদণ্ডটাই পিউর কলোনিয়াল। এরকম আরও বড় বড় টার্ম আছে যেগুলা কলোনিয়ালাইজড। যেমন প্রডাক্টিভ, স্কিল। ব্যক্তি স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা। এক কথায়, ফাঁনোর যে চিন্তার মেথড সেই মেথডে এই সব ডিসকোর্সগুলো ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, সবই কলোনিয়ালাইজড। ফাঁনোর এত হাউকাউ করার বড় একটা উদ্দেশ্য ছিল, এগুলার ডিকলোনাইজেশন করা।

পরাধীন দেশকে স্বাধীন হতে হলে সেই স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিতে হবে সেই পরাধীন দেশের মানুষেরই। না-হলে সেই স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা কখনোই হবে না। স্বাধীনতা বা বিপ্লবের নামে সেটা হবে বেহাত বিপ্লব। ফাঁনোর একটা বড় প্রশ্ন ছিল, কলোনিয়াল দেশগুলো রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা পাওয়ার পরও কেন তাদের সমাজে সেই কলোনিয়াল কালচার রয়ে যায়। মানে মার্তিনিকের ফরাসি বলাটা শিক্ষিত হওয়ার বৈশিষ্ট্য এই কালচার মার্তিনিক স্বাধীন হওয়ার পরও কেন জমজমাটভাবে রয়ে যায়? তার মানে সে আসলেই স্বাধীনতা লাভ করে নাই। কারণ স্বাধীনতা তো শুধু কালেক্টিভ পলিটিকাল স্বাধীনতা না, স্বাধীনতার অর্থ আরও বৃহৎ এবং আরও ব্যাপক। আর ফাঁনোর মতে, কালচারাল কলোনিয়ালিজম সবচাইতে ভয়ংকর এবং সেটার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে কলোনাইজারদের ভাষা। এখানে লক্ষ্য করার বিষয়, ফাঁনো কিন্তু কখনোই ফরাসি ভাষা শিখার বিরুদ্ধে নয়, সে নিজেই ফরাসি ভাষায় প্রথম শ্রেণির লেখক (জ্যাঁ পল সার্ত্রের মতে), ফাঁনো ফরাসি ভাষা না শিখলে সে অশিক্ষিত, মূর্খ, তার প্রডাক্টিভিটি নাই এইরকম বদমাইশির বিরুদ্ধে, তার মতো আমিও ইউরোপীয় চিন্তা দর্শন এবং ভাষা শিখার বিরুদ্ধে কখনোই নই (আমি তো আরও ফরাসি আর জার্মান ভাষা শিখার চেষ্টায় আছি), বরং আমি কলোনিয়াল ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে, এখানে এজন্য আমার গুরু ফাঁনো।

আর ইউরোপীয় চিন্তা, দর্শন, ভাবনা এসবকে ইউরোপীয়, পাশ্চাত্য অ্যান্ড এগুলাই শ্রেষ্ঠ— এই ধরনের গ্লোরিফিকেশনের পেছনে ইউরোপীয় গুটিকতক চিন্তাবিদ দায়ী এবং ইউরোপীয় কলোনাইজাররাও। আমার মতে, চিন্তা ও দর্শনের সিলসিলা একসময় প্রাচীন গ্রীস, রোম, মিশর ও এশিয়া মাইনরে ছিল, ভারতবর্ষেও ছিল, সেখান থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে সেটা আরব হয়ে পাশ্চাত্যে ঢুকেছে, আমি অনেকটা এভাবেই দেখি। কিন্তু এ প্রাচ্য দর্শন এবং পাশ্চাত্য দর্শন এই রকম বাইনারিটাও একটা কলোনিয়াল শ্রেষ্ঠত্বের প্রভাব। অথচ ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট বলি কিংবা রেনেসাঁস, সেটা অরিজিনটা ইউরোপে নয়, সেটার সিলসিলা খুঁজলে বুঝা যায় সেটা কোথাকার। যাহোক, ফাঁনো কলোনিয়ালিজমের কারণ, সেটার প্রকৃতি এবং প্রভাব খুঁজেছেন এবং সেটার সাইকোলজিক্যাল অ্যান্ড পলিটিকাল কনসিকোয়েন্স দেখিয়েছেন। পোস্ট কলোনিয়াল একটা সমাজের চিন্তাভাবনা এবং সংস্কৃতি আদৌও কি কলোনিয়াল ফ্রি নাকি সেই কলোনিয়ালিজমই অ্যান্ড সেটা কেন সেটা ফাঁনো বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। ফাঁনোর মতে, কলোনিয়ালিজম একটা দার্শনিক অবস্থান অর্থাৎ একধরনের প্রভু ভৃত্যের মামলা। প্রভু যখন প্রভুত্বই করে আর ভৃত্যের যখন কোনো সাবজেক্টিভিটি থাকে না, তখন ভৃত্য প্রভুর মতো হতে চায়।

হেগেলের মাস্টার স্লেভ ডায়ালেক্টিসে হেগেল মাস্টার আর স্লেভের সম্পর্ককে একটা ডায়ালেক্টিক মুভমেন্ট হিসেবে দেখেছেন। অর্থাৎ সাবজেক্ট অবজেক্টের দ্বন্দ্ব। কিন্তু ফাঁনো হেগেলের এই সংজ্ঞায় সন্তুষ্ট নয়। কারণ তার মতে, কালো মানুষ ভৃত্য বটে কিন্তু সে সাদা হইতে চায়। কারণ সে মনে করে, সাদা হওয়া শ্রেষ্ঠ এবং সাদা ভালো আর কালো খারাপ। এটা তার মগজে গাথা। সুতরাং তার সাবজেক্টিভিটি নষ্ট হয়ে যায়। এবং সে অবজেক্টই থেকে যায় আর স্বপ্ন দেখে যে, সেও সাদা হবে। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। কারণ সাদা হওয়া সম্ভব না। মানে ফাঁনোর মতে, কালো মানুষ যারা প্রথমে ছিলেন দাস এবং পরে হইছে কলোনিয়ালাইজড, তাদের সাইকোলজিটা এই প্রসেসে কাজ করে আর কি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলি, আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অধিকাংশ আইনই কলোনিয়াল। এদেশের মানুষের সাথে এদেশের যে আইন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা (যা সিম্বোলিক ফাদার) সেটার কোনো সম্পর্ক নাই। এদেশের মানুষের সিম্বোলিক ফাদার এখনো সেই ব্রিটিশ কলোনিয়াল ইন্ডিয়ান অ্যাক্ট অ্যান্ড অল আদার সিস্টেমস। ফাঁনোর চিন্তা পদ্ধতিতে মাপলে প্রশ্ন জাগেই, আমরা কি আদৌ স্বাধীন? বা আমাদের দেশের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে তরুণ তরুণী যারা বিভিন্ন ডিসকোর্স নিয়ে নিয়মিত রাজনীতি ও আলোচনা করে (মুক্তচিন্তা, কালচার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নারীবাদ, সম্মান, জ্ঞানার্জন, পরিবর্তন) সেই ডিসকোর্সগুলো কতটুকু ডিকলোনাইজড? সেগুলা ডিকলোনাইজড করে তারা? আদৌ করে?

ইউরোপীয় সভ্যতা, পাশ্চাত্য বিদ্যা, বস্তুবাদ— এরকম বেশ কিছু টার্ম বা শব্দমালা প্রচলিত যা সমাজের এক শ্রেণির লোকেরা ধর্মের ন্যায় প্রচার করে। আরেক শ্রেণির লোকেরা এটাকে অধর্ম বলে প্রচার করে। আমার মতে, আগে এই শব্দমালা, টার্মিনলোজিগুলো ক্রিটিকালি ভেবে দেখা দরকার। পাশ্চাত্য সভ্যতা বা ইউরোপীয় বিদ্যা বলতে আমরা কি বুঝি তা আগে ক্লিয়ার করা খাস জরুরি। কারণ ইউরোপীয় বিদ্যা, পাশ্চাত্য চিন্তা এগুলোকে খারিজ করার কোনো উপায় নাই এবং খারিজ করায় কোনো মুক্তি নেই, এমনকি যে ধর্মের নামে এগুলাকে খারিজ করা হয় সেই ধর্ম তাকে খারিজ করার ইজাজত দেয় না। তাহলে মূল সমস্যাটা কোথায়? মূল সমস্যা পাশ্চাত্য চিন্তাতেও নয়, ইউরোপীয় বিদ্যাতেও নয়। মূল সমস্যা হলো, উপনিবেশবাদ ও সেইসব উপনিবেশিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি। জ্ঞানের কোনো সীমা নেই, চিন্তার কোনো শেষ নেই। অন্তত বিশুদ্ধ জ্ঞান ও চিন্তার ক্ষেত্রে কোনো জ্ঞান ও চিন্তা ফেলনা নয়। ইউরোপীয় বিদ্যা, পাশ্চাত্য সভ্যতাকে খারিজ করে দেয়া হয় সেটা হলো উপনিবেশবাদের কারণে। কিন্তু এতে একটা ভুল করা হয়। কারণ, সমস্যা এবং সংগ্রামটা করা উচিত উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে, ইউরোপীয় চিন্তার বিরুদ্ধে নয়।

এই যে পাশ্চাত্যের চিন্তা ও জ্ঞানকে আমরা আলাদা ক্লাসিফাই করে পাশ্চাত্য বস্তুবাদ, ইউরোপীয় বিদ্যা এসব ট্যাগ দিছি— এটার মধ্যে একটা ভয়াবহ ভুল ও অজ্ঞতা আছে বলে আমি মনে করি। আর এই অজ্ঞতার একটা কালেক্টিভ সোসাল অ্যান্ড পলিটিকাল কনসিকোয়েন্স হলো প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি, ভায়োলেন্স এবং কোপাকুপির কালচার। ভারতে হিন্দুত্ববাদের যে রাজনীতিটা দেখছি এটা ওটারই প্রতিফলন। এখন সঠিক রাজনীতিটা করতে হবে উপনিবেশবাদ, উপনিবেশিক মুল্যবোধ, কলোনিয়াল ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে।

আমরা আরেকটা ইউরোপ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমরা চাই না— সলিমুল্লাহ খান

ফাঁনো এই ধারার চিন্তায় বড় চিন্তাবিদ এবং পথিকৃৎ। তার মতে, ডিকলোনাইজেশনের রাজনীতি টাই অরিজিনাল বর্ণবাদ বিরোধী এবং বিপ্লবী রাজনীতি নিঃসন্দেহে। প্রশ্ন তো আসে স্বভাবতই যে ৪৭ এ যে কারণে দেশভাগ হলো, সেই প্রতিশ্রুতি পাকিস্তান রাখতে পারেনি ফলে তা ভেঙে বাংলাদেশি স্বাধীন হলো। যে জুলুম অন্যায় বর্ণবাদ থেকে মুক্তির আশায় বাংলাদেশ স্বাধীন হলো সেই বর্ণবাদ, জুলুম, শোষণ, অন্যায় কি কমেছে? যে মুক্তির আশায় আমেরিকা স্বাধীন হয়েছিলো, সেই বর্ণবাদ এবং জুলুম কি কমেছে আদৌ মার্কিন মুল্লুকে? কমেনি। ফাঁনোর মতে, এই না কমার কারণটা লুকিয়ে আছে গোড়াতেই। যে গোড়ায় কেউ পানি ঢালেনি, ঢেলেছে গাছের আগায়। আমাদের পার্থক্য করতে হবে কোনটা বিশুদ্ধ জ্ঞান এবং কোনটা উপনিবেশিক জ্ঞান। কোনটা বিশুদ্ধ চিন্তা এবং কোনটা উপনিবেশিক চিন্তা। কিন্তু মূল্যবোধ এবং কোনটা উপনিবেশিক মূল্যবোধ। এই পার্থককরণের পলিটিক্সটা আমাদের করতে হবে। ফাঁনো সেই পলিটিক্সেরই ইন্টেলেকচুয়াল গ্রাউন্ড দিছেন। ইউরোপীয় বিদ্যা, পাশ্চাত্য মূল্যবোধ বা জ্ঞান বলে একটা খারিজি মূল্য তৈরি করাটা আমি মনে করি, অজ্ঞতা। বরং ইউরোপীয় উপনিবেশিক মূল্যবোধ, পাশ্চাত্য উপনিবেশিক চিন্তাকে মোকাবেলা করা জরুরি। তার বিরুদ্ধে রাজনীতি, লিখালিখি, ডিসকোর্স গড়ে তোলা জরুরি। ইউরোপীয় বিদ্যাকে গালি দিয়ে সেই ইউরোপীয় কলোনিয়াল শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত লোককেই শুধু শিক্ষিত বললে কী লাভ হলো? বরং ইউরোপীয় বিশুদ্ধ বিদ্যা, পাশ্চাত্য ইলম গ্রহণ করা জরুরি জ্ঞানের স্বার্থে। যদি এরকম চিন্তা আরব ভূখণ্ডের লোকজন করতো যে, গ্রেকো-রোমান পাণ্ডুলিপি আমরা নেব না, তাহলে পৃথিবীতে অন্তত জ্ঞানের কফিনের শেষ পেরেক তখনই গাঁথা হয়ে যেত। কিন্তু তারা তা করেনি। কোনন জ্ঞান এবং বর্ণবাদের মাঝে পার্থক্য করা অতি জরুরি। ফাঁনো এ বিষয়ে লিখেছেন। ফাঁনো নিজেই ফরাসি ভাষায় শিক্ষিত লোক, লিওনে ডাক্তারি পড়ে তারপর মনোচিকিৎসক হইছেন ফরাসি কায়দায়। কিন্তু মার্তিনিকে এবং আলজেরিয়াতে যেয়ে সে ফরাসি জ্ঞানকে হেয় করেননি বরং সংগ্রামটা করেছেন ফরাসি কলোনিয়াল চিন্তা, ট্রেন্ড, ফরাসি কলোনিয়াল কালচার ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। অ

নেক হাউকাউই আমরা করি। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করা ও পার্থক্য করার সময় আমাদের নাই। ধর্মের সাফাই আমরা প্রচুর গাইতে বিশেষজ্ঞ কিন্তু ধর্মের জ্ঞান ও চিন্তা প্রসঙ্গে যে বয়ান তা আমাদের ভিতরে নাই। ধর্ম কিন্তু ইলমের বিরুদ্ধে না। কলোনিয়াল ইলম যদি ধর্মের বিরুদ্ধে হয় তাহলে সেই ইলমকে ছিন্নভিন্ন করতে হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে আবার বিশুদ্ধ ইলমকে ধর্মের দোহাই দিয়ে খারিজ করা যাবে না। ধর্ম অন্তত সেই ইজাজত দেয় না বলে আমি মনে করি।