
রূপনির রূপকথা
উপন্যাস ৪
সাজ্জাদ হায়দারপ্রকাশিত : মে ১৭, ২০১৯
সাতদিন ধরে চেষ্টা করেও ঈশান মনের মতো সুরটা পাচ্ছে না। ঠিক এ সময় ঈশানের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। ঈশান ফোনের স্ক্রীনে তাকাল, আনা। আনা আপা আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে এখন লালনগীতির শিল্পী হিসাবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। লালনের আখড়ায় গিয়ে তিনি কিছুকাল ছিলেন। একেবারে বাউলদের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। এখন লালনের গান ব্যান্ডের ধারায় গাইছেন। আনার পক্ষেই ইকবাল ভাইয়ের লেখা গানগুলোর সঠিক সুর দেয়া সম্ভব। আগে আনা বেশ কয়েক বছর কানাডায় কাটিয়ে এসেছে। সেখানে একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক কিংবা বিয়ে হয়েছিল বোধ হয়। সেটা টেকেনি। এ নিয়ে অবশ্য আনা মুখ খুলতে চায় না। এখন একা একটি এপার্টমেন্টে থাকেন। তার ড্যাম কেয়ার লাইফ স্টাইল, পোষাক আষাক মিডিয়াতে আলাদা স্থান দিয়েছে। আনা আপা ফোন করেছে। আশ্চর্য এখনই ঈশান আনা আপার কথা ভাবছিল। ঈশান আনাকে কখনো আনা আপা আবার কখনো শুধু আনা ডাকে। আনা এ ব্যাপারটা উপভোগ করে। আনার বয়স ত্রিশ, ঈশান আনার চেয়ে সাত বছরের ছোট। ইকবাল ভাই আর আনা দুজনের মধ্যে একটা মিল আছে, দুজনেই তারুণ্য পছন্দ করেন। আনাকে ঈশান আনা বলে ডাকলে আনা ওকে ‘ঈশান ভাইয়া’ বলে ডাকে। তারপর দুজনেই হেসে ফেলে।
‘ঈশান আজকের পেপার পড়েছিস?’ আনার কণ্ঠে রাজ্যের উৎকণ্ঠা যেন।
‘না। একটা গানের সুর নিয়ে ফাপড়ে আছি। তোমার হেল্প দরকার।’ ঈশান বলল।
‘সে হবে ক্ষণ। আজ বিকেল ছয়টায় টিএসসিতে আসবি। জরুরি দরকার।’
‘দরকারটা একটু কাশি দিয়ে বলতো, শুনি!’ ঈশান জিজ্ঞাস করলো।
‘আরে বাবা চলে আয়, সঠিক সময়ে না এলে তোর খবর আছে।’ আনা প্রায় ধমকে ওঠে।
‘ঠিক আছে আমি আসছি।’ আনা আপার ডাক উপেক্ষা করা যায় না। আনা মাঝে মাঝে অনেক পাগলামো করে। আনার কণ্ঠে মনে হচ্ছে আজ আনার ওপর কোন পাগলামো ভর করেছে।
ইকবালভাই আনা আপাকে নিয়ে একটি গল্প ফেঁদেছিল। পত্রিকার পাতায় আনা আপার একটা সাক্ষাৎকার পড়ে ইকবাল ভাই একদিন বললেন, উনিশশো উনাশি সালে তিনি ধানমন্ডিতে আনা আপাদের প্রতিবেশী ছিলেন। তখন আনা আপার সাথে ইকবাল ভাইয়ের একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ইকবাল ভাইয়ের কথায় ভীষণ হাসি পেয়েছিল ঈশানের। ইকবাল ভাইয়ের কথা সত্যি হলেও তখন আনা বয়স ছিল চার বছর। ব্যাপারটা খোলসা করে ইকবাল ভাইকে বলতেই ইকবাল এমন ভাব করলেন যেন এমন কোনো কথা তিনি আদৌ বলেননি।
‘এই সব আনাফানা নিয়ে কথা বলার সময় আমার কোথায়? আমি যে আনার কথা বলেছিলাম সেটা আরেক আনা, তোরা কি বলতে কি যে শুনিস!’ ইকবালভাই এ ভাবেই তার প্রতিটি গল্পের সমাপ্তি টানেন।
যাই হোক, বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা সিএনজি নিয়ে ঈশান টিএসসিতে ছুটল। আনার ডাক উপেক্ষা করা যায় না। পকেটে করে ইকবাল ভাইয়ের লেখাগানগুলো নিতে ভুলল না।
চলবে