রূপনির রূপকথা

উপন্যাস ১০

সাজ্জাদ হায়দার

প্রকাশিত : মে ২৭, ২০১৯

১১.
জকি সব সময় নিজের কাজে মুগ্ধ। সব ধন্যবাদ জকি নিজের জন্য তুলে রাখতেই পছন্দ করে। রূপনিকে থ্রাসডে নাইটের পাঁচটি টিকেট গিফটও দিলে দ্বিগুণ দামে কৌশলে রূপনির কাছে আরও পনেরটি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। প্রায় দেড়গুণ টাকা উঠে এসেছে। এই বিশ জোড়া ছেলেমেয়ে জকির টার্গেট। ওর জালের প্রথম খেপের মাছ। ওই দিনই ওদের কাছে ইয়াবা বিক্রি শুরু হবে। খানের লোকটা জকির কাছ থেকে প্রতিটি কাজের ফিরিস্তি প্রতিনিয়তই জেনে নিচ্ছে। জকি এ লোকের সাথে কথা বলার সময় খুব সর্তক থাকে। লোকটিকে সব কথা বলা বিপদজনক। আবার কিছু চেপে যাওয়ার কঠিন। কিছু চেপে যাওয়ার ব্যাপারটা লোকটা টের পেলে সাঙ্ঘাতিক বিপদ। আম-ছালা দুই যাবে। এই লোকটিকে সন্তুষ্ট করতে পারলেই খানের দেখা মিলবে। খানের আস্থায় থাকা যাবে। জিনিয়া আন্টি খানের ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছে। দেশে এই লোকটির বেশ কয়েকটি শিল্প-প্রতিষ্ঠান থাকলেও সব লোক দেখানো। শোনা যায়, আর্ন্তজাতিক অস্ত্র চোরাচালান নেটওর্য়াকের সাথে যুক্ত। জর্ডানের এক রাজকুমার খানের পার্টনার। দুজনে মিলে ক্রুড অয়েলের ব্যবসাও করে। এ সব কারণে খানের কার্যকলাপ জানার পরও সরকারের ক্ষমতা নেই এই লোকের কেশাগ্র স্পর্শ করার। সব কথা সত্যি না হলেও এ লোকের ব্লেসিং থাকলে জকির পক্ষে দুবাই তো বটেই লাসভেগাসে হোটেল চালু করা কোনো ব্যাপার না। তবে ধরনের লোক একটা পর্যায় পর্যন্ত লিফট দেয়। কাজ শেষ হলে ঝেড়ে ফেলে। কাজেই জকিকে আরো সর্তক থাকতে হবে।

রূপনির সাথে যে সর্ম্পকটা হতে চলছে সেটাকে জকি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এগিয়ে নিতে চায়। এই সম্পর্কটা জকি আগামী এক-দুবছর চালিয়ে নিতে চায়। রূপনি নিজের অজান্তেই জকির ইয়াবা নেটওর্য়াকের মধ্যে ঢুকে গেছে। ওকে দিয়ে আরও অনেক কাজ হবে। জকি ওর প্রাইভেট রুমে বসে আকাশ পাতাল ভাবছে। সাইড টেবিলে ব্লাক লেভেলের গ্লাস আর কাঁচা ছোলা। একটু আগে জকি জিম সেরে এসেছে। জকি ব্লাক লেভেলের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে নানা ভাবনায় ডুবে গেল। খানের লোকটি আজ কয়েকটি বিশেষ প্যাকেট পাঠিয়েছে। জকি এখন ইয়াবা ডিলার। ছুরি দিয়ে খুব কায়দা করে প্যাকেটটা কাটার পর জকি দেখতে পেল লালচে-কমলা রংয়ের বড়িগুলো। ইয়াবা, অদ্ভুত এক নেশার নাম। অন্য নেশার সাথে এই নেশার তুলনাই চলে না। এই বড়ি সেবনের পর দেহের মধ্যে এক বন্য শক্তি চলে আসে। দেহের কোনো বিশ্রামের প্রয়োজনই হয় না। ক্লান্তি উবে যায়, নিজেকে অপরিমিত শক্তির অধিকারী মনে হয়। না ঘুমিয়েও ক্লান্তিহীন থাকা যায় তিন চার দিন। নিজের কাজের পক্ষে এটাই জকির বড় যুক্তি, ইয়াবা সেবনকারীরা অপার্থিব এক আনন্দ পাচ্ছে। এর মূল্য কম কিসে! ডাক্তাররা অনেক কথাই বলে। ইয়ারা সেবনকারীরা এক সময় নিস্তেজ হয়ে যাবে, আয়ু বৈকাল্য হবে, অকাল বার্ধ্যকের কবলে পড়বে। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু পেতে হলে কিছু তো দিতেই হয়! জকি এ সবের পরোয়া করে না। যারা চারশত টাকায় একটা ইয়াবা বড়ি ক্রয় করে, তাদের বাবাদের অন্তত টাকার অভাব নেই। ভবিষ্যতে যদি ইয়াবা সেবনকারিরা অসুস্থ হয় তবে এদের বাবাদের টাকায়, ইয়াবা রোগি, এসব ছেলেমেয়েরা চিকিৎসা শেষে ভাল হয়ে যাবে। বড়লোক বাবাদের পকেটের কিছু টাকা খসবে মাত্র। ভবিষ্যতে জকি ইয়াবা নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলবে। আইডিয়াটা মাথায় আসতেই জকি ওর নোট বইয়ে টুকে রাখল। আগামি দুবছর পরই এই নিরাময় কেন্দ্র চালু করা হবে।  দু বছর পর ইয়াবা সেবনকারীদের সংখ্যা দিয়ে অনায়াসে একটা নিরাময় কেন্দ্র চালু করা যাবে। তখন বিদেশি ডোনারদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। কৈয়ের তেলে কৈ ভাজার মতো হবে ব্যাপারটা। জকি হবে দেশের তরুণতম সমাজসেবক। প্রেসের লোকেরা জকিকে নিয়ে মাতামাতি করবে। এ ভাবে এক সময় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জুটেও যেতে পারে। এসব ক্ষেত্র তৈরি করতে হলে এ দেশে এখন দ্রুত ইয়াবার বিস্তার ঘটাতে হবে। নিজের ভাবনায় জকি জকি নিজেই বিস্মিত হলো। আজ সত্যিই ওর মাথাটা খুলে গেছে। একটা সম্ভাবনাময় নুতন ব্যবসা ওর দরজায় কড়া নাড়ছে যেন! ইয়াবা ব্যবসাটা চড়িয়ে দিতে হবে। আবার নিরাময়ের ব্যবস্থাও করতে হবে। দুটোই প্রফিটাবল।

এই প্যাকেটগুলোতে পাঁচ হাজার বড়ি আছে। প্রতি বড়ি চারশো টাকায় করে বেচতে হবে। পাঁচ হাজার বড়িতে বিশলাখ টাকা। এছাড়া ডিজে পার্টির নানা লভাংশ। প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। এক মাসে যথেষ্ট। জকিকে আর ঠেকায় কে! চলবে