রূপনির রূপকথা

উপন্যাস ২৬

সাজ্জাদ হায়দার

প্রকাশিত : জুন ১৭, ২০১৯

২৭.
ফাস্ট ফুডের দোকানটায় এক কোনায় সোফা স্টাইলের চেয়ারে বসে আছে নাভা আর রুশনি। খাবারের জন্য ওরা অপেক্ষা করছে। রুশনি খিদে একদম সহ্য করতে পারে না, বিশেষ করে ফাস্টফুডের দোকানে এলে। বলা চলে ফাস্টফুড প্রীতিই রুশনিকে স্থূলকায়া করেছে। নোভা রুশনিকে সবসময় স্থূলকায়া দেখতে চায়। খাবার আসতে দেরি হওয়ায় এখন রুশনির মুড অফ। ব্যাপারটা নোভা জানে, খাবার পেটে গেলেই রুশনির মুখে কথার ফোয়ারা ফুটবে। রুশনির কথা তখন থামায় কে? এজন্য নোভাও খাবারের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। ব্যাটারা খাবার দিতে অহেতুক দেরি করছে যেন!

এ সময় দোকানটায় ঈশান এসে ঢুকল। ঈশানকে দেখে রুশনি বিব্রত বোধ করল। রুশনি ঈশানের মুখোমুখি হতে চায় না। রূপনির ব্যাপারে রুশনির মায়ের ভূমিকা ওকে এখনো লজ্জায় ফেলে দেয়। রুশনি জেনেছে এই ছেলেটাই শুধু রূপনিদের বাড়ি যায়, ওদের খোঁজ খবর রাখে। অথচ ছেলেটা ওদের অল্পদিনের পরিচিত। এ জন্য রুশনি কৃতজ্ঞ চোখে ঈশানের দিকে তাকায়। রুশনির মা-ই রূপনিকে কলেজ ছাড়া করার মূল হোতা। রুশনির মা এমন একটা কাণ্ড করে বসবে কে জানে! মায়ের কথা অমান্য করার সাহস রুশনির নেই। সাহস থাকলে অনেক আগেই রূপনিদের বাসায় যেত, রূপনির পাশে থাকত। রুশনি প্রাণপণে প্রার্থনা করছে যেন কোনোক্রমেই ঈশান ওকে না দেখে। সব সময় যা হয়, প্রাথর্নায় কোনো কাজ হয় না। ঈশান রুশনিকে দেখে ফেলেছে, এদিকেই আসছে।

সরি তোমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য। আমি আসলে তোদেরকেই খুঁজচ্ছিলাম। নোভার পাশের সিটটায় বসতে বসতে ঈশান বলল। নোভা ঈশানের অনেকদিনের বন্ধু। এরপরও নোভা রূপনির ঘটনার পর ঈশানকে এড়িয়ে চলে। রূপনির বাবার ধরা পড়া থেকে নিহত হওয়ার সময় পর্যন্ত থানা-পুলিশের ভয়ে একদিনও রূপনিদের বাড়ি যায়নি। ঈশানকেও যেতে নিষেধ করেছে। ঈশান কোনো নিষেধ মানেনি। রূপনিদের বাড়ি গিয়েছে, দুঃসময়ে পাশে থেকেছে। অথচ থানা-পুলিশের কোনো বিপদে পড়েনি। ঈশানের কাছে নিজেকে নোভার খুব ছোট মনে হয়।

নোভা যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন সবাই মিলে চেস্টা করে রূপনিকে বাঁচা। ঈশান কোনো ভূমিকা ছাড়াই বলল।
রূপনির কি হয়েছে? নোভা আর রুশনি সমস্বরে বলল।
রূপনি তোদের পুরানো বন্ধু। তোদের জানা উচিত ছিল রূপনির কি হয়েছে! রূপনি বাবাকে হারিয়েছে, ভার্সিটি থেকে ইক্সপেল্ড হয়েছে, ওদিকে জকির সাথে ব্রেক আপ হয়েছে। এতকিছু হলে মেয়েটা কি ভাবে বাঁচে! তারপর তোরা কেউ ওকে দেখতে গেলি না! তোরা কি ঠিক করেছিস!
ঈশানের কথা শুনে নোভা কিংবা রুশনি কিছু বলল না। রুশনি দু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ওর চোখের পানি লুকাতে চেষ্টা করে।

আমরা এখন কি করতে পারি? অনেকক্ষণ চুপ থেকে নোভা মৃদু স্বরে ঈশানকে জিজ্ঞাস করে।
রূপনির বাবাকে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কিন্তু রূপনিকে ভার্সিটিতে ফিরিয়ে আনা যায়, জকির সাথেও বোঝা পড়া করা যায়, তোরা আবার আগের মতো রূপরি সাথে মিশতে পারিস। ঈশান বলল।
তুই ঠিক বলেছিস ঈশান। রূপনির জন্য আমাদের এসব করা উচিত। সমস্যা হলো, এই এক্সপালশনটা কি ভাবে উইদ্ড্রো করা যাবে? সব গার্ডিয়ান মিলে ব্যাপারটা করেছে। ভিসি কি রাজি হবে? নোভা বলল।
এসব কথা আমাকে বলছিস কেন! আমি তোদের ভার্সিটির ছাত্র না। কি করবি না করবি এটা তোদের ব্যাপার। যাক, আমি চলি। ঈশান উঠে দাঁড়াল।

প্লীজ ঈশান, একটু বসো। রুশনি ঈশানের হাত টেনে ধরে ওর দিকে তাকায়। রুশনির চোখে পানি চক্চক্ করছে। অগত্যা ঈশান ফের বসল।
বিশ্বাস কর ঈশান আমি রূপনিকে ভীষন মিস করি। প্রতিরাতে আমি ওর জন্য কাঁদি, আমার মাকে তোমরা চেন না। মায়ের কথার বাইরে গেলে মা আমাকে খুন করে ফেলবে। এ কথা বলে রুশনি হু হু করে কেঁদে ফেলে। চলবে