শ্রেয়া চক্রবর্তীর খুদে গল্প ‘বিশুদ্ধ সিঙাড়া’

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৯, ২০২৩

পাড়ার মোড়ে নতুন সিঙাড়ার দোকান দিয়েছে হরিদা। দোকানের নাম ‘বিশুদ্ধ সিঙাড়া’। বিকেল হলেই গাওয়া ঘিয়ের সিঙাড়া ভাজার গন্ধে সারা পাড়া ম ম করে। গাওয়া ঘি দিয়ে বানানো, তাই সিঙাড়ার দামও বেশি। বিশু পাগল ওই সময় সিঙাড়ার দোকানের আশপাশ ঘুরঘুর করে। বাতাসে মাতাল করা গন্ধ। বিশুর পকেট ফাঁকা। হরিদার দোকানের সিঙাড়ার ওপর খুব লোভ ওর। কিন্তু কিনবে কী করে? তাই শুধু ঘুরঘুর করে আর দেখে বিরাট কড়াইয়ে কেমন গরম গরম সিঙাড়া ভাজা হচ্ছে।

 

একদিন সিঙাড়ার কড়াই ছেড়ে মদন দু’মিনিটের জন্য উঠেছে। সেই ফাঁকে ট্রে থেকে গরম গরম ভেজে রাখা সিঙাড়া চারটে উঠিয়ে নেয় বিশু। কিন্তু এই সিঙাড়া সে খাবে কী করে? কতদিন শুধু তাকিয়ে দেখেছে, ভাবতেও পারেনি চার চারটে সোজা তার মুঠোয় চলে আসবে। খেলেই তো শেষ, আর তারপর যদি সুযোগ না পায়! চারটে সিঙাড়া দুহাতে মুঠো করে, মুঠো শূন্যে ঘোরাতে ঘোরাতে বিশু চিৎকার করে, দেখো পেয়েছি, আমি পেয়েছি, আমি পেয়েছি .... হা হা হা হা আমি পেয়েছি।

 

হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন বিশুর কলার চেপে ধরে। মদন ঠোঁট বেঁকিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বিশুর দিকে তেড়ে এসে বলে, দাঁড়া তোর মজা দেখাচ্ছি চোর কোথাকার...

 

বিশু ভয় না পেয়ে হঠাৎ শিশুর মতো হেসে উঠে বলে, ধুরশ্লা খেয়ে নিলেই ভালো হতো! বলেই সিঙাড়াগুলো মদনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে দৌড় লাগায়।

 

সেদিন সারা রাত ঘুম আসে না বিশুর। সারা জীবনের মতো একবার হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়ে আসতে হলো। বাড়ির উঠোনে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে বিশু চাঁদ দেখে আর নিজের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে আধো আধো ভাষায় বলতে থাকে, আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা।

 

বিকেল হলেই এখনও রোজ হরিদার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বিশু। মদন তাকে আড়চোখে একবার দেখে নিয়ে সিঙাড়ায় মন দেয়। হরিদার দোকানের খুব নাম হয়েছে এখন। বিকেল হলেই খদ্দেরের ভিড়। হরিদা হাসি মুখে এক একজন করে জিজ্ঞেস করে, খাবে না নিয়ে যাবে?

 

যে বলে নিয়ে যাব, হরিদা ঠোঙায় ভরে তাকে সিঙাড়া দেয়। আর যে বলে খাব, তাকে শালপাতার বাটিতে গরম গরম সিঙাড়া দিয়ে এগিয়ে দেয় হরিদা। লোকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খায়। যে খায় তাকে দেখিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে বিশু। আ-আ করে কী যেন বলে! লোকটা তখন সরে গিয়ে অন্যদিকে গিয়ে খায়। আর যে ঠোঙায় করে নিয়ে যায়, তার সামনে গিয়ে বিশু হেসে হেসে বলে, নিয়ে যাচ্ছেন কেন? খেয়ে নেন। বলেই দৌড়ে পালায়। পাগল ভেবে লোকজন খুব একটা পাত্তা দেয় না।

 

বিশুর মাথাটা সময়ের সাথে আরও খারাপ হয়েছে। সে এখন কাউকে গরম সিঙাড়া খেতে দেখলেই ‘তোকে খেয়ে নেব’ বলে তেড়ে যায়। এদিকে হরিদার বিশুদ্ধ সিঙাড়ার দোকানের নাম কী অদ্ভুত নিয়মে বদলে গিয়ে, লোক মুখে ‘বিশু পাগলের দোকান’ নামে আরও প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। লোকে এখন পাগলের দোকানের সিঙাড়া খাবে বলে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে।