সাদ রহমানের গদ্য ‘আপনি ফুটেন, মানে ফুটলে ভালো হয়’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪

নিজের বইয়ের মার্কেটিং নিজের করতে হবে— বাংলাদেশের প্রকাশকরা এই ব্যাপারে লেখকদেরকে বাধ্য করতেছে। এর প্রথম সমস্যা, এই `বাধ্যতা` লেখকদেরকে হতাশা আর ক্লান্তি ছাড়া কিছু দিতেছে না, যার ফলে অনেক ভালো লেখক দিনে দিনে ছোট লেখকে[র ইমেজে] পরিণত হইতেছেন। দ্বিতীয় সমস্যা, দুনিয়ার সব বইয়ের মার্কেটিং এক বইমেলার ভিতরে আইসা জমা হওয়ায় কোনো বইয়ের মার্কেটিংই বাস্তবে হইয়া উঠতেছে না।

ধুলায় দুনিয়া অন্ধকার হইয়া গেছে। যেই দেশের প্রকাশকেরা যত অচল বা পুরাতনপন্থী হবে সেই দেশের বইয়ের বাজার তত ছাগল থাইকা যাবে। এইটা এবার লেখকদেরকে বুঝতে হবে। বছরের সব বই এক বইমেলার ভিতরে বেইচা ফেলার হীনবুদ্ধিতে আটকায় যাওয়ার সমস্যা প্রকাশকদের, তার কারণে লেখকদের মেধা আর ইমেজের অপচয় বা মৃত্যু হইতে থাকবে তা মাইনা নেওয়া যায় না।

টাকা বা কাগজের অপচয়ের কথা না-ই বললাম। রকমারির আবির্ভাব না হইলে এতদিনে এইখানকার বেশিরভাগ প্রকাশনী বইমেলায় ভারতীয় বই আর গাইড বই বেচার আন্দোলনে নাইমা যাইতো। নাইলে তারা খাইতো কী? আমাদের প্রকাশকরা অভূতপূর্ব অলস আসলে। এতই যদি অলস, তাইলে তারা এই ব্যবসায় নামছিল ক্যানো, তা অদ্ভুত বিষয়।

২.
ফেসবুক বা স্যোশাল মিডিয়ার উত্থান হইতে ধার কইরা হরেদরে পুঁটিমাছ লেখকদের বই প্রকাশ নিয়া কোনো আপত্তি নাই, যে কোনো প্রকাশক যে কোনো লেখকের বই প্রকাশ করবে। কিন্তু যেই বই যিনি প্রকাশ করবেন, সেই বইয়ের মার্কেটিং, বিক্রি ও ভবিষ্যৎ সবই তার ওপর বর্তায়, এবং বর্তাইতে থাকবে।

কোনো বই বাইর কইরা সাইরা আপনি যদি ভাবেন লেখক নিজে এখন এই বই বেইচা দেবে, আর বেইচা দিতে না পারলে সেই লেখকের `বিক্রি` নাই, তাইলে বইয়ের ব্যবসা আপনারে দিয়া হবে না। আপনি ফুটেন, মানে ফুটলে ভালো হয়। হয়তো ব্যবসাটাকে আপনার আরো সীমিত বা নির্দিষ্ট পরিসরে ভাবতে হবে। রাজধানীর বাইরে বহু জেলাশহর আছে, সেইখানে আপনি বই প্রকাশ কইরা সারা বছর ধইরা বিক্রি করার লোক পাইবেন।

অনলাইনেই বা বিক্রি করতে পারতেছেন না ক্যানো? শুধু ডিসেম্বর মাস আসলে কাছা দিয়া নামবেন আর ফেব্রুয়ারিতে বাঁশ টাঙ্গাইয়া বইসা পড়বেন— এইভাবে হয় না। বইবিক্রির ব্যাপারে লেখকদের ওপর নির্ভরশীল না থাইকা এবং একমাত্র বইমেলার ধুলার অন্ধকারে গাদাগাদি না কইরা খোলা বাতাসে মুক্তি খোঁজার চেষ্টা করেন।

আপনাদের এই বইমেলা-কালচারই বাংলাদেশের সাহিত্য, বই এবং সৃজনশীলতা সবই ধীরে ধীরে নষ্ট কইরা দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

৩.
আমি অবাক হইয়া লক্ষ্য করতেছি, দেশের নামকরা প্রকাশনীগুলাও লেখকদেরকে নিজ নিজ বইয়ের মার্কেটিং করতে বাধ্য করতেছে। ফেসবুকে যদি লেখকরা এইভাবে বই বেচতে না নাইমা পড়তো তাইলে এই প্রকাশকদের কী অবস্থা হইতো, ভাবেন তো! আর ফেসবুক যদি আছিলোই তাইলে সেইখানে তারা নিজেরাই নিজেদের মার্কেটিং ক্যানো করতেছে না!

লেখক ভাইদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হিসাবেই বলতেছি, যদি দেখেন আপনার বইয়ের প্রচারণা আপনার নিজের করা লাগতেছে, তাইলে বুঝবেন আপনি আবারও গুলিস্তানের খপ্পড়ে পড়ছেন। একই ভুল বারবার কইরেন না। আপনাকে এইখান থেকে সইরা আসতে হবে।

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

লেখক: কবি ও তাত্ত্বিক