স্ট্রবেরি চাষ করে সফল ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০২৪

মেহেরপুরে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে স্বাদে-বর্ণে-গন্ধে অতুলনীয় ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ স্ট্রবেরি চাষ করছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এ জেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ।

কৃষি অফিস বলছে, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় স্ট্রবেরি আবাদে আগ্রহীদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রামের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং মঞ্জুরুল ইসলাম শখের বশে বাড়ির ছাদের ১০টি টবে স্ট্রবেরি চারা লাগিয়েছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি রাজশাহী টিস্যুকালচার থেকে বীজ সংগ্রহ করে দেড় বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। তিনি দেড় বিঘা জমিতে ৭ হাজার স্ট্রবেরি চারা রোপণ করেন। তার একেকটি গাছে ৭০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম স্ট্রবেরি হয়েছে।

ইতোমধ্যে তিনি দেড় শতাধিক চারা বিক্রি করেছেন। আর স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন ৫ লক্ষাধিক টাকার। আগামীতে অন্তত আরও তিন লক্ষাধিক টাকার স্ট্রবেরি বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। মঞ্জুরুল ইসলামের এই সফলতা দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন শীতকালীন এই বিদেশি ফল স্ট্রবেরি চাষে।

স্ট্রবেরি চাষি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শখ থেকেই মূলত স্ট্রবেরি চাষ শুরু। পরে চাষটি বাণ্যিজিকভাবে করতে রাজশাহী টিস্যুকালচার থেকে চারা সংগ্রহ করে দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করি। জমি প্রস্তত থেকে শুরু করে ফল পাওয়া পর্যন্ত সব মিলিয়ে আমার সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে আমি প্রায় দেড় লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে ৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে জমিতে যে ফল আছে তাতে এখনও ৩ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন দেড় থেকে ২ মণ পর্যন্ত ফল সংগ্রহ হচ্ছে। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা দরে। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে তাই জেলার অনেকে আগ্রহ নিয়ে স্ট্রবেরি কিনছেন। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গাছ থেকে নিয়মিতভাবে ফল পাওয়া যাচ্ছে। এটি শীতকালীন আবাদ। রোদের তাপমাত্রা বাড়লেই স্ট্রবেরি গাছ মারা যাবে এবং ফল দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আগামী বছর ৪ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করব। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মাঝেও স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ দেখা দিয়েছে অন্য কৃষকদের মাঝে।

জয়রামপুর গ্রামের কৃষক হাফিজুল বলেন, জেলাতে স্ট্রবেরি প্রথম চাষ হচ্ছে। ফলটি দেখতে লোভনীয় এবং খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। লাভজনক একটি ফসল। মঞ্জুরুল ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে আগামী শীতে আমিও এই চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মুজিবনগরের যুবক শাকিল রেজা বলেন, স্ট্রবেরি একটি বিদেশি ফল। আমাদের মেহেরপুরের মাটিতে এত সুন্দর ফল হবে। তা কখনও কল্পনা করিনি। মঞ্জুরুল ইসলাম ভাই দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে যে টাকা লাভবান হয়েছেন তা অন্য আবাদে সম্ভব নয়। ভাল ভাবে বাজারজাত করতে পারলে আরও লাভ হওয়া সম্ভব। আমি চারা সংগ্রহ করে এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী বছর দুই বঘিা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করব।

স্ট্রবেরি ক্ষেতে কর্মরত শ্রমিক জিয়াউর রহমান বলেন, আমি তিন মাস ধরে এখানে কাজ করছি। নতুন ফসল হিসেবে অনেক চাহিদা। প্রতিদিন সকাল-বিকেল স্ট্রবেরি তুলি। অন্য কাজের পাশাপাশি এখানে শ্রম দিচ্ছি। আমাদের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।

গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান বলেন, আমি দুই বছর স্ট্রবেরি চাষ করেছিলাম। ফলন হয়েছিল বেশ ভালো। কিন্তু স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় এবং মেহেরপুরের মানুষ স্ট্রবেরি গুণাগুণ না জানায় বিক্রি করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তাই স্ট্রবেরি আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। বর্তমান বাজারে স্ট্রবেরির চাহিদা বেড়েছে। আগামীতে আবারও স্ট্রবেরি চাষ শুরু করব।

পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রবেরি অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল, এলাজিক এসিড, ফেরালিক এসিড, কুমারিক এসিড, কুরোসিটিন, জ্যান্থোমাইসিন ও ফাইটোস্টেরল। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্ট্রবেরির ভিটামিন সি-এর উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি করে। খাদ্য তালিকায় অন্যান্য ফলের সঙ্গে স্ট্রবেরিকে রাখা অনেক জরুরি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষক হালদার বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ জেলা। এখানে উন্নতমানের ও বিদেশি ফল কৃষকরা চাষ করছেন। এখানকার কৃষকরা নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে অনেক আগ্রহী। তেমনি মেহেরপুর জেলাতে প্রথম বছরেই মুজিবনগরের মঞ্জুরুল ইসলাম দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছে। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের একটি ফসল। তিনি বাজারমূল্য ভালো পাচ্ছেন। আশা করি জেলাতে আরও চাষ হবে। আমরা আগ্রহী অনেককেই পরামর্শ দিচ্ছি।