
স্ত্রী এবং রক্ষিতা
পর্ব ৭
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : নভেম্বর ০৩, ২০১৮
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বাদলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খপ করে বাদল মেয়েটির হাতটি চেপে ধরলো। শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল মেয়েটির। না, বাদল তার হাত চেপে ধরেনি। কিন্তু তার মনের মধ্যে ওই শঙ্কাটি কাজ করছে। মেয়েটি আস্তে করে বাদলের পাশে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
ভয় করছো কেন? আমি তো তোমার গায়ে হাত দিচ্ছি না। ভালোভাবে বসো।
মেয়েটির শরীর তবু কাঁপছে। পায়ের উপর পা চেপে রেখে কাঁপুনি থামানোর চেষ্টা করছে মেয়েটি। কমছে কোথায়? আরো বাড়ছে। বাদল মেয়েটিকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তার কাঁধে একটা হাত রাখতেই কারেন্টের শক খাওয়ার মতো করে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। এবার মনে হচ্ছে মেয়েটি হাউমাউ করে কেঁদেই ফেলবে।
প্লিজ, আমাকে রেপ করবেন না, আমাকে ছেড়ে দিন, আমাকে বাবা-মা`র কাছে যেতে দিন, আমি এখানে মরে যাব... হাউমাউ করে কাঁদতে গিয়েও মেয়েটি কাঁদতে পারে না। কয়েকদিনে সে বুঝে গেছে, সে খারাপ জায়গায় এসে পড়েছে। এখানে তার মতো অনেক মেয়েই গুমড়ে কেঁদে মরে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
সে কি এখান থেকে বের হতে পারবে? কে বের করবে তাকে? এখনও সে পাশের রুম থেকে মেয়েদের কান্নাজনিত আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। কয়েক দিনে বহু পুরুষ মানুষ তার দেহের উপর হামলে পড়তে চেয়েছে। কিন্তু মাসি দেয়নি। কারণ এই লোকটি নিষেধ করেছে। কেন করেছে? লোকটি তাকে একাই ভোগ করবে? ভোগ যখন করবে তাহলে কয়েক দিন লোকটি তার উপর অত্যাচার করলো না কেন? লোকটি কি মানুষ না পশু?
কি ভাবছো?
মেয়েটি চুপ।
তোমার নাম কি?
মেয়েটি চুপ।
তোমার বাড়ি বোথায়?
মেয়েটি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলবে কি বলবে না তা ভেবে ভয় পাচ্ছে।
আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি তোমার সাথে কিছুই করব না, তবে তোমার উপর আমার অধিকার ছেড়ে দিলে অন্য অসংখ্য পুরুষ তোমার নরম দেহ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। এমনকি এক সঙ্গে দু-চার-পাঁচজন মিলেও তোমাকে রেপ করতে পারে। তুমি এইটাকে রেপ বললেও আমাদের কাছে রেপ করা নয়, আমরা প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তোমার দেহটি ভোগ করছি। তুমি ইচ্ছে করলেই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে না। তোমাকে সবাই নষ্টা বলবে। পরিবারের কেউই তোমাকে সুন্দরভাবে মেনে নিবে না। সবাই তোমাকে ছি ছি করবে। এখানকার নিয়মকানুন মেনে নিয়ে তোমাকে এখানেই থেকে যেতে হবে। আমাকে তোমার শরীর ভোগ করতে না দিলেও অন্যদের দিতেই হবে। সবাই অর্থ নিয়ে বসে আছে। সবাই ছিঁড়ে খাবে তোমার দেহ...
মেয়েটি শুধুই শুনছে। কী বলবে বা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অনেক অজানার দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ে থাকে বাদলের দিকে।
তোমার নাম কি?
রিক্তা।
তোমার বাড়ি কোথায়?
বাড়ি ঢাকাতে।
ঢাকাতে? হা হা হা... ঢাকা তো অনেক বড়, ঢাকার কোন জায়গায়?
মগবাজার ওয়ার্লেস গেইট।
তোমার বাবা-মা আছেন?
হ্যাঁ।
তোমার ভাইবোন?
আমরা তিন ভাই দুই বোন, আমি সবার ছোট।
তুমি কিসে পড়ালেখা করো?
ক্লাস নাইনে।
এখানে কিভাবে এলে?
আমার এক বয়ফ্রেন্ড এখানে বিক্রি করে দিয়ে গেছে।
এই কথাটি শুনার পর বাদল অনেকটাই বিচলিত হয়ে পড়ল। তার মেয়েটি এখন কোথায়? স্কুলে? নাকি বাসায়? পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে মিতালীকে ফোন দেয়। সে অস্থির হয়ে পায়চারী করতে করতে মিতালীর সঙ্গে কথা বলতে থাকে, তার মধ্যে বেশ অস্থিরতা কাজ করছে। মেয়েটি ভালো আছে তো? যাক, মেয়েটি স্কুলে। মিতালীকে সে মেয়ের প্রতি ঠিকমতো খেয়াল রাখতে বললো।
এই মেয়ে, তুমি সবে ক্লাস নাইনে পড়ো, তোমার এত চুলকানি কেন বয়ফ্রেন্ডে নিয়ে এখানে আসার?
রিক্তা চুপ। তার চোখ পানিতে ছলছল করছে। সে অশান্ত গভীর সমুদ্রের পানির মধ্যে ডুবতে বসেছে। সে কি বাঁচতে পারবে? না কি ডুবে যাবে? তার হাতের কাছে কোনো খড়কুটু নেই, যা আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করবে। চোখের সামনে যা দেখছে তা শুধুই চোরাবালির দুঃস্বপ্ন। আজকের এই ঘটনার জন্য রিক্তা নিজেই দায়ী। সে কখনও তার বাবা-মা`কে বুঝবার চেষ্টা করেনি। পরিবারের বড়দের সকল বিধিনিষেধকে সে মাড়িয়ে চলেছে। খারাপ বন্ধুত্ব তার জীবনকে দাড়বিহীন নৌকায় পরিণত করেছে। আজ সে অনুতপ্ত। আজ সে পরিশ্রান্ত।
এই যে মাডাম, অনেক কথা হয়েছে। এবার দেরি না করে ঝটপট পরনের কাপড় খুলে রেডি হও। আমি আসছি। বাদল হনহন করে ঘরের বাহিরে বেরিয়ে গেল...
চলবে