স্ত্রী এবং রক্ষিতা

পর্ব ৮

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৫, ২০১৮

রিক্তা হতভম্ব। সে কী শুনলো! সে এখন কী করবে? সে কী তার পরনের সকল পোষাক খুলে ফেলবে? তার শরীরটা বরফের মতো শীতল হতে শুরু করেছে। লোকটা বাইরে বেরিয়ে গেল। এই বুঝি লোকটি দৌড়ে এসে তার নরম শরীরের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। মনের ভিতরের ভীতু স্বত্তাটি যুদ্ধ করছে সপ্তম ইন্দ্রিয়ের সাথে।

হঠাৎ বাদল এসে ঘরে ঢুকল। রিক্তার চিন্তামতো তার উপর ঝাপিয়ে না পড়ে বাদল অনেকটা নীরবেই তার সামনে এসে দাঁড়ালো। তার হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ। সে বলল, বসো, দাঁড়িয়ে আছো কেন?

রিক্তা অনেকটাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বাদলের দিকে। লোকটি কী বলে! হা হা হা... বাদলের হাসিতে রিক্তা অনেকটাই বিব্রত। এবার বাদল রিক্তার হাত ধরে খাটের উপর বসিয়ে দিল। বলল, এই নাও, এসব তোমার জন্য।

খাটের উপর বহু জামাকাপড় ও প্রসাধনী সামগ্রি। রিক্তা, নাও। এসব তোমার কাছে রাখো। তোমার শরীরের নোংরা কাপড়চোপড় ছেড়ে এগুলো পরে নাও।

কয়েকদিন ধরে রিক্তা মাসির দেয়া পুরুনো কাপড়চোপড় পরে আছে। তার পরনে যা ছিল তা এখানে আসার প্রথম দিনেই বাদল টেনেহিচড়ে ছিড়ে ফেলেছে। লোকটিকে রিক্তার খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে। এই লোকটিই তার শরীরে অমানবিক অত্যাচার করেছিল সেইদিন। তার জীবনের সুন্দর স্বপ্নের কুৎসিত যবনিকাপাত ঘটিয়েছিল এ লোকটি। লোকটির উপর যত না রাগ হচ্ছে তারচেয়েও বেশি রাগ হচ্ছে ওই ছেলেটির উপর, যাকে সে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিল।

রিক্তার কাছে এখন ভালবাসা মানেই অবিশ্বাস, মিথ্যার সাথে মিতালী, অন্যের সাথে প্রতারণা। ‘আমি তোমার জন্য জীবন দিতে পারি।’ এই আশ্বাস পুরোটাই ধোঁকাবাজি। তার উপলব্ধির পরিপক্বতা হবার আগেই ঘুণপোকা খেয়ে ফেলেছে তার স্বপ্নের বীজ। আজ তার জীবন ছাগলে খাওয়া সকালের শিশিরসিক্ত কচি দূর্বাঘাস। সারাদিন শরীরের উপর ছাগলের অত্যাচার মুছিয়ে দিতে, রাতের অন্ধকার পেরিয়ে ভোরের শিশিরের অপেক্ষা। রিক্তা ভালবাসতে ভুলে গেছে...

যাও, এই ড্রেসটি পড়ে এসো। বাদলের এমন প্রশ্নে রিক্তা অবাক নয়নে তাকিয়ে বাদলের দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দেয়। যাও, বাথরুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এসো। রিক্তা ড্রেস পরিবর্তনের জন্য গেলে বাদল উৎসাহী মন নিয়ে খাটের উপর বসে থাকে।

কি করছে বাদল এই ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে? তার ঘরে তো স্ত্রী-কন্যা রয়েছে। তার মনের ঘরের নিয়ন্ত্রণ কি তার হাতে নেই? রিক্তা দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই যেন ঘরটি আলোকিত হয়ে উঠল।

ওয়াও, চোখ ফেরানো যায় না... এত সুন্দর! মনের অজান্তেই বাদলের মুখ থেকে গড়গড়িয়ে এই বাক্যগুলো বের হয়ে পড়লো। মেয়েটি এত সুন্দর কেন! মুহূর্তেই বাদলের ঘাড়ের উপর দিয়ে কামনার গরম বাতাস বইতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে, ঘরের মধ্যে বাতাসের প্রবাহ অনেকাংশে কমে গেছে। বাদলের হৃৎপিণ্ডের কাঁপুনি শরীরের শিরায় শিরায় চেপে বসেছে। হরিণ শাবকের গতিপ্রকৃতি দেখে ঝাপিয়ে পড়ার ছক এঁটেছে হিংস্র নেকড়েবাঘ।

হরিণ শাবকের কচি দেহটা কামড়িয়ে খাবে এই লালসায় জিহবা দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে নেকড়ের। মুখের লালাসিক্ত জিহবাটি লকলক করছে... নরম শরীরে নখের কঠিন আঁড়ড় দেয়ার জন্য নেকড়ের ফোস ফোসানি... নেকড়ের দৃষ্টি শাবকের সমস্ত শরীর চষে বেড়াচ্ছে। রিক্তা ধীর পায়ে এগিয়ে বাদলের সামনে এসে দাঁড়ায়। লাল-নীল মিশ্রণের সালোয়ার-কামিজে বেশ মানিয়েছে রিক্তাকে। বুকের উপর উৎবাস্তুর মতো ছড়িয়ে রাখা সিফনের ওড়নাটি রিক্তার সৌন্দর্যরূপকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বাদলের দেহে কামনার আগুন চেপে বসেছে, এখন সে কি করবে?

চলবে