
স্ত্রী এবং রক্ষিতা
পর্ব-৯
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : নভেম্বর ১০, ২০১৮
বাদল ঘরে ঢুকেই রিক্তাকে বিছানার উপর শুইয়ে দেয়। রিক্তার মধ্যে অাজ ভয় কাজ করছে না। সে অবাক হয়ে বাদলের কর্মকাণ্ড দেখছে! সে অনেকটা অাত্মসমর্পনের ভঙ্গিমায় শুয়ে রয়েছে বিছানায়। চোখ বন্ধ করে, ধীর লয়ের নি:শ্বাসের স্পন্দনে, বাদলের স্পর্শের অপেক্ষায় রিক্তা। এই বুঝি ঝাপিয়ে পড়লো বাদল তার দেহের উপর! বন্ধ চোখের নি:স্তব্ধতাকে ভেঙ্গেে দিয়ে হা হা হা...হাসির শব্দে রিক্তা চোখ খোলে।
হা হা হা...করে বাদল হাসছে। অচেনা লোকটির এমন প্রানখোলা হাসিতে ঘরটা যেন অালোতে অালোকিত হয়ে উঠল। অচেনা লোকটিকে অারও বেশী অচেনা লাগছে রিক্তার। রিক্তা গত কয়েকদিনে এই বাড়ির প্রতিটি প্রাচীর থেকে শুধুই কান্নার শব্দ শুনেছে। প্রথম দিন এসে সে নিজেও এ বাড়িতে কষ্টে কেঁদেছে। সে বুঝে গেছে, সে নিষিদ্ধ জগতে এসে পড়েছে। এখান থেকে বের হবার রাস্তা তার জানা নেই। এখন সে অজানা পৃথিবীর, অজানা ঘটনার মুখমুখি হবার দৃঢ প্রত্যয় নিয়ে ফেলেছে। এখানে নিজের বলতে কিছু নেই।
হা হা হা...কি ভাবছো? রিক্তা অবাক হয়ে বাদলের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। লোকটিকে প্রথম দিন যেমন অমানুষের মতো লাগছিল, অাজকে তেমনটা লাগছে না। অাজকে কেমনজানি লাগছে... কেমন জানি...টা কেমন? সেটাও সে বুঝছে না। মনের মধ্যে সবকিছু উলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে। লোকটি গত কয়েদিনে একবারও তার দেহের উপর চড়ে বসেনি। লোকটি শুধুই তার যত্ন নিয়ে গেছে। অাজকে লোকটি কি করতে চাচ্ছে?
হা হা হা...তোমাকে পুতুলের মতো লাগছে। বাদলের এমন মন্তব্যে সে বিব্রত নয়। সে অাসলেই পুতুলের মতো সুন্দর দেখতে। শরীরের রং একটু শ্যামলা হলেও তার স্কুলের সকল ছেলেদের মধ্যেমণি ছিল সে। নিজের সৌন্দর্যরূপের দিকে তাকাতে গিয়ে, নিজের ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর সময় পায়নি। এত অল্প বয়সেই সে পছন্দের মানুষ দ্বারা প্রতারিত হবে বুঝতেও পারে নি।
বাদল খাটের দিকে এগিয়ে গিয়ে রিক্তার পাশে বসে। রিক্তা উঠে বসতে যাবে এমন সময়... দাড়াও...দাড়াও... উঠবা না, শুয়ে থাক। অামি তোমাকে একটু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চাই। বাদল রিক্তার বুকের উপর থেকে শিপনের ওর্ণাটি টেনে নিয়ে নিজের পাশে রাখে। রিক্তা চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে। লজ্জায় দু হাত বুকের উপর নিয়ে রাখলেও তা বাদল সরিয়ে দেয়।
শিশির সিক্ত কচি দূর্বাঘাসের মাথায় হাত বুলিয়ে বাদল প্রকৃতির নির্যাস নিতে চায়। এত সুন্দর! এত সুন্দর দূর্বাঘাসের ডকাটি... লকলক করছে। কচি দূর্বাঘাসগুলোকে ছিড়তে গিয়েও ছিড়তে পারল না বাদল। বাদল রিক্তার শরীরের গন্ধ নিতে অারও একটু ঘেষে বসে। বাদল দু চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস নিচ্ছে... রিক্তার শরীরের পারফিউম এর গন্ধ বাদলকে পাগল করে তুলছে।
হাত দুটো বাধনহারা হয়ে ছুটে বেড়াতে চায় সমস্ত দেহে। প্রকৃতির উচুনীচু সীমানার সৌন্দর্যরূপ দেখতে মরিয়া মনের মধ্যে লুকিয়া থাকা মানুষটি। বাদল রিক্তার দিকে ঝুকেপড়ে ঠোটে, ঠোটের স্পর্শ নিতে যায়... রিক্তা দু হাত দিয়ে বিছানার কাপড় মুষ্টি করে ধরে, দুচোখ অাবেশে বন্ধ করে অপেক্ষা করে এক অশনিসংকেত এর জন্য।
অাজকে রিক্তা বাদলের চোখে যে পরিমান কামনার ঝড়ের অাগাম বার্তা দেখেছে, তাতে তার প্রকৃতির সব কিছুই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার কথা। কিন্তু কই? ঝড়ের ত কোন লক্ষন দেখছে না, সে অসাড় হয়ে শুয়ে রয়েছে, শরীরটা হিমশীতল ঠান্ডা হয়ে ধীরেধীরে কাঁপছে, লোকটি কি করছে? লোকটির শরীরের কামনার ঢেউ তার শরীরে এখনও পড়ছে না, যে লোকটি তার এই নরম দেহটা কুকুরের মতো ছিড়ে খেয়েছিল, যার চোখের বিভৎসতা দেখে রিক্তা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল, সেই লোকটি...!
(চলবে)