স্ত্রী এবং রক্ষিতা

পর্ব ১১

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৯, ২০১৮

রিক্তার নগ্ন দেহের সকল সীমানা মাড়িয়ে গোসলখানার ঝর্ণার পানি অতি বিষণ্ণতায় নামছে মেঝেতে। শরীরের প্রতিটি লোমকূপের ভাঁজে ভাঁজে সাবানের ফেনার কঠিন মিতালীতে নিজের শরীরে বাদলের স্পর্শের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাচ্ছে।

রিক্তার নগ্ন শরীরকে দেখে নিজেরই খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে। এই শরীরটি তার কতই না আপন ছিল। ছিল গোলাপ ফুলের নরম পাপড়ির মতো। রিক্তার চোখের লোনা পানি নিমেষেই হারিয়ে যাচ্ছে ঝর্ণার প্রবল পানির ক্ষিপ্র গতিতে।

রিক্তার শরীর কাঁপছে কোনো এক অজানা নখের ভয়াবহ আঁচড়ে। রিক্তা মুক্ত হতে চায় এই অভিশপ্ত বাড়িটি থেকে। কিন্তু কিভাবে! রিক্তা অনেকটা সময় ধরে নিজের শরীরটাকে পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখেছে।

ঠক ঠক ঠক। গোসলখানার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।
কে?
আমি বাদল, দরজা খোলো।
আমি গোসল করছি।
আমি জানি, দরজা আলগা করো।
আমি দরজা খুলতে পারব না।
কেন, সমস্যা কি?
আমি গোসল করছি।
তা তো জানি, দরজাটা একটু খোলো।
আরে বাবা, আমি তো কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকিনি। উদোম দেহে কীভাবে আমি এখন দরজা খুলব?

বাদল হেসে উঠল, হা হা হা... আমি ভেতরে ঢুকব না। আমি তোমাকে কাপড় দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে আছি। হালকা করে দরজাটা আলগা করে আমার হাত থেকে কাপড়গুলো ন্যাও।

রিক্তা নিজেকে দরজার আড়ালে লুকিয়ে রেখে হাত বাড়িয়ে বাদলের কাছ থেকে কাপড়গুলো নিয়ে নিল। রিক্তা কিছুক্ষণ পর নিজের পোষাক পরে বাথরুম থেকে বের হলো। প্রথমেই তার চোখ পড়ল বাদলে উপর। বাদল রিক্তাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। রিক্তা অবাক। এরই মধ্যে বাদল রিক্তার জন্য দুপুরের খাবার সুন্দর করে বিছিয়ে রেখেছে বিছানার উপর।

আসো, আসো। তাড়াতাড়ি আসো। খুব ক্ষুধা পেয়ে। বাদল পাশের হোটেল থেকে মুরগির রোস্ট, রুই মাছের ভুনা, ডাল সবজি নিয়ে হাজির। রিক্তা নীরবে বাদলের পাশে বসে দুপুরের খাবার খেতে থাকে।

বাদল জিগেশ করল, তুমি কি তোমার বাবা-মা`র কাছে ফিরে যাবে?
হঠাৎ করে বাদলের এমন প্রশ্নে রিক্তার শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেল। সে কি বলবে? সে কি সত্যিই শুনছে?
বাদল আবার জিগেশ করল, তুমি কি যাবে?
রিক্তার দুচোখ বেয়ে লোনাপানি পড়তে শুরু করলো খাবার প্লেটে, সে নিজের অজান্তেই হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করল। অনেকটা সময় পার হলো নীরবে।
তোমাকে আগামী সপ্তাহে তোমার বাবা-মা`র কাছে পাঠিয়ে দেব। মাসিকে তোমার জন্য যা পাওনা তা মিটিয়ে দেব। রিক্তা, তোমাকে তোমার পরিবার ঠিকভাবে মেনে নেবে?

বাদলের এমন প্রশ্নে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সে তো অনেকদিন হলো বাড়িতে যায়নি, সে বাড়ির কাউকেই কিছু না বলে বেরিয়ে এসেছে। এতদিন পর বাড়িতে ফিরে সবাইকে কি বলবে? সে বেশ্যাপাড়ায় ছিল? সে তার পছন্দের মানুষের সাথে পালিয়েছিল? কার সাথে পালিয়েছিল? সে কে? সে রেপ হয়েছে বলবে? সে কি বলবে? তার ছোট্ট মাথাটা কাজ করছে না। চোখ দুটো ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। দুচোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে বসে থাকে। বুকের ধড়পড়ানি দ্বিগুণ বেগে বেড়ে গেল।

তুমি এক সপ্তাহ ভেবে নাও।
না, আমি মা`র কাছে ফিরে যাব।
তুমি যাও, তবে ফিরিয়ে দিলে চলে এসো আমার কাছে। আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
হা হা হা... বাদলের কথায় হেসে ফেলল রিক্তা। আপনে আমাকে ভালবাসেন? হা হা হা....
কেন? আমি ভালবাসতে পারি না?
রিক্তাকে এই প্রথম হাসতে দেখল বাদল। হাসলে তাকে পরীর মতো লাগে।
আজকে রাতে আমি তোমার কাছে থাকব, বাসায় ফিরব না।
থাকবেন, আপনারে নিষেধ করছে কে?
তুমি থাকতে দিবে?
বাসায় বউ-বেটি আছে, তাদের ছেড়ে আমার কাছে থাকবেন কেন?
আরে ধুর, তারা থাক তাদের জায়গায়। তোমার কথা আলাদা, তুমি আমার নতুন বউ।
বউ! হা হা হা... বউ হলাম কখন থেকে?

এমন অগোছানো কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে চলতে থাকল সময়ের কাটা। রিক্তা অজ্ঞাতবশত দুর্বলতা ফিল করে লোকটির প্রতি। এরই মধ্যে বাদল রিক্তার সাথে বেশ কয়েকবার দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। রিক্তা কেন জানি আর নিজেকে বাদলের কাছ থেকে নিজেকে নিবৃত করতে পারেনি, আবার পারলেও তা করেনি। রিক্তার মনে আনন্দের জোয়ার। সে বাসায় ফিরে যেতে পারবে, যে লোকটি তাবে ফিরে যেতে দিচ্ছে, তার জন্য এতটুকু করতে পারবে না! বাদল যখনই রিক্তির কাছে এসেছে, রিক্তা তখনই নিজের দেহকে বাদলের কাছে সমর্পণ করেছে। রিক্তার বাসায় ফিরে যাবার সময় লোকটির জন্য মনটা কেঁদে উঠেছিল। লোকটার প্রতি সে বেশ কৃতজ্ঞ।

বাদল তাকে মগবাজার পৌছিয়ে দিয়ে বলেছিল, সমস্যা হলে ফোন দিও। তার হাতে নতুন একটা মোবাইল সেট কিনে দিয়ে চলে এসেছে বাদল। ফোনটি নিতে না চাইলে বাদল অনেকটা জোর করেই রিক্তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। রিক্তা মোবাইলটা লুকিয়ে রেখে বাড়ির দিকে পা বাড়াল...

চলবে