স্ত্রী এবং রক্ষিতা

পর্ব ১২

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৬, ২০১৮

বাদল সময় ভালো যাচ্ছে না। বাসায় কেমনজানি মনমরা হয়ে বসে থাকে। মিতালীর চোখে বেশ কয়েকদিন থেকেই বিষয়টা চোখে পড়েছে। বিয়ের পর থেকে বাদল মিতালীর কোনো চাহিদা অপূর্ণ রাখেনি। সন্তানদের প্রতিও বাদলের যথেষ্ট নজর। কিন্তু ইদানীং বাদলকে মিতালীর কিছুটা অপরিচিত অপরিচিত লাগছে, কেমনজানি হয়ে গেছে সে। খাবার-দাবারও ঠিকমতো খাচ্ছে না। গত দু’সপ্তাহ থেকে বাদল একটি মুহূর্তের জন্যও মিতালীর শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখেনি। দুদিন আগে ছেলেমেয়েরা বাসার বাইরে গেলে মিতালী নিজ গরজেই নিজের দেহটাকে বাদলের দেহে মিশিয়ে রঙিন করতে চেয়েছিল। কিন্তু মাঝপথেই বাদল শরীর ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

বাদল এত কামুক স্বভাবের, মিতালী বিয়ের আগে ছবিতে দেখে বুঝতে না পারলেও বাসর রাতে টের পেয়েছিল, ছিহ, কী নোংরা লোকটি! ভাবতেই শরীরটা শিরশির করে ওঠে। বিয়ের পর থেকে জোর করে ঠেলে ঠেলে বাদলকে অফিসে পাঠিয়ে দিতে হতো, এখন উল্টো। সারাদিন বাসায় শুয়ে থাকে। ব্যপারটা বুঝতে পারে না মিতালী। তবে বাদলের অন্য কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক যে আছে, তা মিতালী বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে বাদল অফিসের কাজের কথা বলে রাতে বাসায় ফেরে না, সে কোথায় থাকে? কি করে? প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যায়। বাদল মাঝে মধ্যে ড্রিংকস করে, খুব বেশি না হলেও মিতালী এইটা পছন্দ করে না। ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে দেখে বাদল বাড়িতে মদ খায় না, অফিসে বসেই খেয়ে আসে।

বিয়ের পরপর বাদল বাসায় ফিরেই মিতালীর দেহের উপর চেপে বসতো কিন্তু সময়ের পরির্বতনে সেইটা এখন আর করে না। মিতালী বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে। বাদল দিনকে দিন তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইদানীং রিক্তা নামের একটা মেয়ের ফোন আসে বাদলের মোবাইলে। মেয়েটি প্রায়ই ফোন দেয়, কথা বলে। বিষয়টি মিতালীকে বেশ পীড়া দেয়।

বাদল সকালে বাজার করতে যাবার সময় মোবাইলটা ঘরে ফেলে গেছে। হঠাৎ ফোন কল আসায় মিতালী রিসিভ করে। কে বলছেন? হ্যালো... হ্যালো... কে বলছেন?
মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। মিতালী বলেই যাচ্ছে, হ্যালো... হ্যালো, কে বলছেন?
এবার ওপাশ থেকে জবাব ভেসে আসে, আমি রিক্তা।
রিক্তা! আপনি কাকে চাচ্ছেন?
বাদল সাহেবকে।
উনি তো বাজারে গেছেন। কিছুক্ষণ পরই ফিরবেন, কিছু বলতে হবে?
রিক্তা কিছুটা সময় চুপ থেকে বলে, না, ঠিকাছে। আমি পরে ফোন করব।
মিতালী মেয়েটির কথায় কিছুটা সময় চুপ থাকে। এরপর বলে, আচ্ছা, আপনি কোথা থেকে কল করেছেন?
আমি ওনার অফিস থেকে।
ওনার অফিস থেকে! ওনার অফিসে তো রিক্তা নামের কোনো মেয়ে চাকরি করে না!

এবার রিক্তা অনেকটাই হতভম্ব! রিক্তা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ফোনের লাইনটা কেটে দেয়। হ্যালো... হ্যালো... মিতালী বুঝতে পারলো মেয়েটি লাইন কেটে দিয়েছে।

মিতালীর চেহারায় চিন্তার প্রতিচ্ছায়া জেঁকে বসেছে। মেয়েটি এমন আচরণ করল কেন? মেয়েটির নাম এর আগে দু-চার বার শুনেছে বাদলের মুখ থেকে। বাদল বলেনি, কিন্তু বাদলের বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে ফোন রিসিভ করতে যেয়ে এই নামটি উচ্চারণ করেছিল। আজকে নিজ কানেই শুনলো। তবে মেয়েটি যে বললো, সে বাদলের অফিসে কাজ করে! বাদল তো কখনো বলেনি, তার অফিসে রিক্তা নামের কোনো মেয়ে চাকরি করে! মিতালী বাদলের অফিসের মোটামুটি সবাইকেই চেনে। কিন্তু কে এই রক্তা?

চলবে