
অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরীন
স্ত্রী এবং রক্ষিতা
পর্ব ১৫
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮
রিক্তার নরম শরীরের আগুনে জ্বলতে গিয়ে বাদল ভুলেই গেছে অনেক কিছু। ইদানীং বাসাতেও কম যায় বিভিন্ন তালবাহানায়। রিক্তার কামনা তাকে বিমুখ করে ফেলেছে নিজ সংসার থেকে। বাদল রিক্তার ঘরে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ তার দৈহিক কামনা মেটাতেই ব্যস্ত থাকে। ক্ষণিকের বিশ্রামও তার মেলে না। কামনা... উত্তেজনা... এবং কামনা... এর মাঝেই বাদল প্রশ্ন করে, তুমি কেন আবার এখানে ফিরে এলে? কিছুই তো বুঝলাম না।
রিক্তা কী উত্তর দিবে ভাবছে। বাদল জিজ্ঞেস করল, বলো, তোমার সমস্যা কি হয়েছিল?
আমার কপাল পুড়েছে যেদিন ওই শুয়রের বাচ্চা এখানে বিক্রি করে ফেলে যায়। তারপর তো তুমিই আমার সতিত্ব কেড়ে নিয়েছো।
হ্যাঁ, আমি নিয়েছি। কিন্তু তোমাকে এই পরিবেশ থেকে বের হয়ে যাবার সুযোগও করে দিয়েছি।
তা দিয়েছো, কিন্তু ততক্ষণে আমার জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করে দিয়েছো। সব দোষ তোমার তা আমি বলব না, দোষ আমারও আছে। আমি যদি প্রথম থেকে বাবা-মা`র কথা শুনে ভালোভাবে চলতাম, তাহলে হয়তো আমাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। আমার কপাল পোড়া। আমি নিজেই নিজের কপাল পুড়িয়েছি।
বাদল বলল, ঠিকাছে বুঝলাম, তবে ফিরে এলে কেন?
উপায় দেখিছিলাম না।
মানে?
এখান থেকে বাসায় ফিরে যাবার পর থেকেই, বাসার কেউই আমার সাথে ভালো ব্যবহার করছিল না। সবাই ছি ছি করছিল। একমাত্র মা ছাড়া কেউই আমার নাম শুনতে পছন্দ করছিল না। তুই কই গেছিলি? এতদিন কোথায় ছিলি? এতদিন কি করেছিস? তুই তো ভালো মেয়ে নয়, তুই নষ্ট হয়ে গেছিস। তোর চেহারা দেখাও পাপ। কত্ত অপবাদ। এখানে আমি তোমার দ্বারা যেভাবে দৈহিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, বাসায় আমার পরিবারের মানুষ দ্বারা ততটাই মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার কাছে দুটো জায়গাই সমান বলে মনে হয়েছে। কোথাও শান্তি নেই। ভবিষ্যতেও পাব না। তাই অনেক কিছু চিন্তা করে তোমার কাছে ফিরে এসেছি।
বাদল বলল, তোমাকে আমি প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসি। কিন্তু আমি চাইনি তুমি আবার এখানে ফিরে আসো।
আমিও চাইনি। কষ্ট করে বাসাতেই থেকে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না। হাতি কাদায় পড়লে মশাও লাথি মারে! আমার জন্য মা প্রতিনিয়ত কেঁদেছে, কখনও আমাকে গালি দেইনি। আমার জন্য আল্লার কাছে দু-হাত তুলে দোয়া চেয়েছে সর্বক্ষণ। আমি কেঁদেছি, হাউমাউ করে কেঁদেছি। আমার কান্না মা`র হৃদয়কে স্পর্শ করলেও অন্যের করেনি। করবে কেন? আমি তো খারাপ হয়ে গেছি। আমি নষ্ট হয়ে গেছি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছিল আমারই দূরস্পর্কের চাচা। আমার শরীরে হাত দিতে চেয়েছিল। তার কথা, তুই তো বেশ্যা, তোর আবার লজ্জা কিসের? আমি প্রচণ্ড জোরে তার অণ্ডকোষে লাথি দিয়েছি। ওই শুয়োরটা এখন হাসপাতালে। পরিবারের লোকজন আমার উপর আরো ক্ষেপেছে... আমি কোনো উপায় দেখছিলাম না। আমি ভালো হতে চাইলেও আমার পরিবার, সমাজ ভালো থাকতে দেবে না। সমাজ চায়, আমি বেশ্যা হয়েই থাকি। ভালো মেয়ে মানুষের শরীরে কোনো পুরুষ মানুষ সহজেই হাত দিতে পারে না, বেশ্যার শরীরে হাত দিতে পারে। তাই অনেকেই চায় আমি বেশ্যা হয়েই থাকি। বেশ্যা হয়ে থাকতে হলে বাসায় থাকব কেন? এজন্যই আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি।
বাদল বলল, তুমি নিজেকে কখনও বেশ্যা বলবে না, তুমি আমার স্ত্রী।
হা হা হা... স্ত্রী! কিভাবে?
চলবে