অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

৫২ সালের আন্দোলন এখনও চলমান

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১

ভাষার স্বাধীনতা মানেই শুধু একটা ঘোষিত রাষ্ট্র ভাষা বা বানান শুদ্ধ প্রক্রিয়া নয়। বাংলাদেশে এখনো ৫৭ ধারার মতো আইন জারি আছে কিংবা বাংলা ভাষাকে এখনো ইংরাজি ভাষার চেয়ে কমজোরি ভাবা হয়। ৫২ সালের আন্দোলন এখনো একটা চলমান আন্দোলন, স্রেফ তার দাবি আলাদা আজ।

ব্রিটিশরা শুধু জমিতেই কলোনি গড়ে নাই, তারা আমাদের মনেও কলোনি গড়ে দিয়ে গেছে। তাই আজও ফটাফট ইংরাজি বলা বাঙালিদের জ্ঞানী আর সাহেব শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবেই দেখা হয়। ইংরাজি বলা ছাত্রদের বেশি মেধাবী, ইংরাজি বলা শিক্ষকদের বেশি শিক্ষিত আর দক্ষ মনে করা হয়।

একই কথা কেউ বাংলায় বললে যত না গুরুত্ব দেয়া হয়, সেই একই কথা ইংরাজিতে বললে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। ইংরাজি যেন মেধাবীদের পরিচয়পত্র! হ্যাঁ, ইংরাজি ভাষা একটা আন্তর্জাতিক সেতু। কিন্তু সেটা তৈরির পিছে সাম্রাজ্যবাদই প্রধান হারিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। এভাবেই একদিন সারা দুনিয়া-জাহানে ইংরাজি ভাষা আরো মহান হয়ে উঠবে (হয়েই গ্যাছে)।

বিশ্বভারতীতে যখন পড়াশোনা করতাম, সেখানে ইউরোপীয় অনেক সহপাঠী পেয়েছি। যাদের সাথে ভাষা বিষয়ক আলাপে এটাই বুঝেছি, তারা ইংরাজিতে অনেক দুর্বল। বিশেষ কিছু উন্নত দেশের কথা বলছি। যতটা না হলেই নয়, তারা ঠিক ততটা ইংরাজি ব্যবহার করে। তাও সেটা বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে।

আমার আফসোস, যে লোকটা নিজের সেরা সাহিত্যকর্ম বাংলায় লিখেছিলেন, তারপর ইংরাজিতে তার অনুবাদ করেছিলেন, তারই প্রতিষ্ঠানে বাঙালি শিক্ষক বাঙালি ছাত্রদের সামনে ইংরাজিতে ক্লাস নেন! সরাসরি ইংরাজিতে রিসার্চ লিখতে হয় এখানে। কারণ ইংরাজি মাধ্যম নামের এক অদ্ভুত জিনিস এখানে চালু আছে।

শুধু বিশ্বভারতীতেই নয়, বাংলাদেশ কিংবা আফ্রিকাতেও একই অবস্থা। তৃতীয় বিশ্বের সকল দেশের আন্দোলন ধীরে ধীরে শুধু ‘দিবসে’ পরিবর্তিত হয়। পুঁজির কাছে ভাষা স্রেফ একটা প্রোডাক্ট।

লেখক: কবি ও কার্টুনিস্ট