নানা দল ও মতের মাইক

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২২, ২০১৮

প্রযুক্তির সবচে জঘন্য আবিষ্কার কি? অনেকেই তার নিজ নিজ মত দেবেন। কিন্তু আমার মত হচ্ছে, মাইকের আবিষ্কার। এ বস্তুটির ব্যবহার আজকের বাংলাদেশে এত বেশি মাত্রায় পৌঁছেছে যে, মানুষের অবস্থা এখন ত্রাহি মধুসূদন!
ভোর থেকে শুরু হয়, সুখবর সুখবর সুখবর... খাঁবাড়ি পারু শেখের মুরগির খামারে একশো দশ টাকা কেজি দরে বয়লার মুরগি বিক্রয় করা হচ্ছে... এ মাইক পেরিয়ে গেল তো ওদিক থেকে চলে এলো আরেকজন। সর্বোচ্চ শব্দে মাইকের আওয়াজ, বেরাদারানে ইসলাম, বেরাদারানে ইসলাম... অমুক তারিখে অমুক মসজিদ মাঠে এক বিশাল ইসলামি জলসার আয়োজন করা হইয়াছে...
এছাড়া রয়েছে আরও নানা দল ও মতের মাইক। এরকম নানা মাইকের শব্দে মানুষ নিঃশব্দে সব কেন মেনে নিচ্ছে, তাই বুঝি না। এই যে শীত এলে সারা দেশে ওয়াজ মাহফিলের নামে যে আয়োজন হয়, তা কি সত্যিই ইসলাম প্রচার করে? তা যে করে না, বিবেকবান যে কোনও মানুষ এরকম একটি জলসায় উপস্থিত থাকলে বুঝতে পারবেন। দেশের সাধারণ মানুষ আরসব ব্যাপারের মতো ধর্মীয় ব্যাপারেও মূর্খ। এ মূর্খতার সুযোগে সুরেলা কণ্ঠস্বরের অধিকারী কিছু তথাকথিত মওলানা জীবিকা নির্বাহ করে খাচ্ছেন।

সে যাক, বলার কথা হচ্ছে, পরিবেশ দূষণ বর্তমানে এক অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। নানাভাবে আমাদের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণগুলির মধ্যে শব্দদূষণ একটি। বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে, তা খুবই আশংকাজনক। এরপরও আমরা সেদিকে তেমন দৃষ্টি দিচ্ছি না। আবার অনেকে বলে থাকেন, এটার নিরসন সম্ভব নয়।
আমার কথা হচ্ছে, কেন সম্ভব নয়? এ সমস্যাগুলো মানুষেরই তৈরি। আমরা একটু সচেতনতা হলেই এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

মানুষের তৈরি এমন একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য পরিবেশগত সমস্যা হলো শব্দদূষণ। বাড়িতে, অফিসে, রাস্তাঘাটে এমনকি বিনোদনের সময়ও আমরা বিভিন্নভাবে শব্দদূষণের শিকার হচ্ছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ পরিবেশ দূষণ রোধে সোচ্চার। বাংলাদেশেও বর্তমানে পরিবেশ দূষণ রোধের বিষয়টি একটি আলোচিত বিষয়। অনেক ব্যক্তি বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি তথা পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। প্রচার মাধ্যমগুলোকে এ ব্যাপারে আরো এগিয়ে আসতে হবে। অতি সম্প্রতি পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ ঘোষণা জনস্বার্থ তথা পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ। যা সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রচার মাধ্যমগুলো এগিয়ে এসে তা কার্যকর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণ-পানিদূষণ রোধ এবং বনায়নের বিষয়গুলো আলোচিত হলেও শব্দদূষণ সম্পর্কে আলোচনা বা চিন্তাভাবনার গন্ডি একেবারেই সীমিত।
শব্দদূষণের কারণেও মারাত্মক রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন এ নিয়ে কিছু কাজ করলেও তা সমস্যার তুলনায় খুবই সামান্য। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে তেমন কোন আইন নেই, ট্রাফিক আইনও যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ রোধ, পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার সীমিতকরণসহ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। শব্দদূষণের কিছু মৌলিক সমস্যা চিহ্নিত, সে সম্পর্কে জনসাধারণের মতামত গ্রহণ এবং তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কিছু সুপারিশমালা এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে-যা জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের নীতি নির্ধারণে সহায়ক বলে আমাদের বিশ্বাস।