অমিতাভ পালের পাঁচ কবিতা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯

একান্নবর্তী

কোনোকিছু ছেড়ে চলে গেলে আমার বুক ভেঙে যায়
একটা ক্যাশমেমো কিংবা বাতিল একটা টর্চলাইট
বা বিবর্ণ হয়ে পড়া কোনো অর্থহীন স্মৃতি—
কোনোকিছুই ফেলতে ইচ্ছা করে না আমার
বউয়ের অনবরত ধমকের পরেও
সব আমি জমিয়ে রাখি আমাদের ঘরে
ড্রয়ারে
আমার বুকপকেটে
ওরা যদিও কোনো কাজেই লাগে না
তারপরও ওরা যে আছে, এই ভেবে আমি শান্তি পাই

কোনোকিছু ছেড়ে চলে গেলে আমার বুক ভেঙে যায়
তাই আমি সবকিছু জমিয়ে রাখি আমার পৃথিবীতে
ওদের জায়গা দিতে গিয়ে আমি গাছতলাতেও থাকতে রাজি

চিন্তাই নগ্নতম

তাকে ভাষার পোশাক পরিয়ে আমরা বাইরে পাঠাই
আর সে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে
নিমন্ত্রণ রক্ষা করে ফেরে

ভাষা একটা থান কাপড়ের মতো বড়
সেখান থেকে প্রয়োজন মতো টুকরা টাকরা কেটে নিয়ে
আমরা চিন্তার পোশাক বানাই—
আমরা সবাই আসলে দর্জি

আমাদের দেহের নগ্নতা মূলত একটা চামড়ার পোশাক

সহজ পাঠ

বইয়েরা সব জাদুঘর
পাতায় পাতায় তারা সাজিয়ে রাখে জ্ঞান গল্প কল্পনা
রাক্ষস খোক্ষস ডাইনি ডাইনোসর— সব
তোমাকে শুধু একটা বই কিনে তার মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে
তারপর বের হওয়ার সময় তুমি দেখবে
বিশাল এক জাদুঘরের একটা কামরা
তোমার ঘোরা হয়ে গেছে
জানা হয়ে গেছে ওই কামরায় রাখা সব জিনিসপত্রের
নাম ধাম ঠিকুজি কুষ্টি চেহারা
আর এইটুকু জানার পরে এখন তোমার ইচ্ছা করছে
বাকি কামরাগুলিতেও একবার ঢুঁ মারতে
তোমার কৌতূহল তোমাকে খোঁচাচ্ছে বারবার

বইয়েরা সব জাদুঘর
ওরা তোমাকে নিজেকে চিনতে শেখায়

শ্যামাসঙ্গীত

আমাদের অন্ধকারকেও দরকার—
নিজের একাকিত্বের জন্য
রহস্যের জন্য
আলোর জন্য
অন্ধকার তাই আমাদের সাথে সাথে আছে
আমাদের বন্ধুর মতো
বোনের মতো

আলো আর অন্ধকারকে নিয়ে
আমরা একান্নবর্তী সংসার পেতেছি
আর ওদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি
আমাদের দিনরাত্রির দায়

অন্ধকার আমাদের মা

সাবঅল্টার্ন স্টাডি

এটা একটা বেড়ার বর্ণনা
কেরোসিন কাঠে তৈরি সস্তা বেড়াটা
কোথাও পেরেক দিয়ে আটকানো
কোথাও তার দিয়ে বাঁধা
কোথাও তাকে একটু শক্তসমর্থ দেখায়
কোথাও নড়বড়ে— ভাঙা
বেড়াটার কাঁধে দায়িত্ব চেপেছে অন্যের ছাগল ভেড়া আটকানোর
যাতে আমাদের জমির ফসল বাঁচে
হেমন্তে নবান্নের উৎসব হয়

এটা একটা বেড়ার বর্ণনা
যার কারণে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আমাদের সম্পন্ন গ্রাম