‘একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে ইসি’

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : আগস্ট ২৪, ২০২৫

নির্বাচন কমিশন একটি দলের বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আজ রোববার বিকেলে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বরাবরই এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এটি দলকানা একটি পার্টি অফিস এবং একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনকে দল নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা না পেলে ইসি পুনর্গঠনের দাবিও তুলবে এনসিপি।”

সীমানা নির্ধারণ নিয়ে শুনানিকালে এনসিপি নেতা আতাউল্লাহসহ তিনজনের ওপর হামলার প্রতিবাদে হাসনাত আব্দুল্লাহ ইসির ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “আমরা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়ে যাব। আমরা পর্যবেক্ষণ করবো নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয় কিনা।”

দুপুরে নির্বাচন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাবিত সীমানা নিয়ে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের দাবি ও আপিল আবেদন নিয়ে শুনানির সময় মারামারি হয়।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ বলেন, “বিএনপির রুমিন ফারহানা ও তার দলের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা করেছে।”

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “বর্তমানে ইসিতে যারা যারা রয়েছেন তারা অতীত কাঠামোর পিক অ্যান্ড চুজ এর ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমরা তাদের বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকাকে সবসময়, এখনও পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ করেছি। রোববারের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে তার ধারণা মিলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আজকে পুরো বাংলাদেশ যে ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এটি মূলত আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে এবং সেই নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপি কী ভূমিকা রাখবে, পুলিশ কি দর্শকের ভূমিকা রাখবে কি না, কী ভূমিকা পালন করবে সেটি প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনের সামনে নির্বাচন ভবনে এ অবস্থা হলে দেশে বিএনপি কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে তার মহড়াও হয়ে গেছে।”

হাসনাত বলেন, “নির্বাচন অফিসে যদি এই অবস্থা হয়, সারা বাংলাদেশে এই বিএনপির যারা রয়েছে, এই গুণ্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তারা কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে সেটির টেস্ট ম্যাচ আজকে হয়ে গিয়েছে। বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহান আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। ১৫ বছর নাকি উনি অনেক ভালো ছিলেন। উনি অবশ্যই ভালো থাকবেন। কারণ উনি যত ধরনের সুবিধা রয়েছে সব ধরনের সুবিধা নিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন কতিপয় পার্টির পার্টি অফিস হয়ে গিয়েছে। আমরা বলে এসেছি, বারবার বলে এসেছি যে, আমরা একটি গ্রহণযোগ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে যেতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আবার গুণ্ডাতন্ত্রের দিকে যেতে চায় না। দেশের মানুষ আবার ১/১১ এর মঞ্চস্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে না।”

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে বস্তুনিষ্ঠ পেশাদারত্বের ভূমিকায় আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন কমিশন যেভাবে দলকানা, একটি দলের প্রতি একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেভাবে নির্লজ্জের মতো কাজ করছে, সেটি আমরা যে নির্বাচনমুখী হচ্ছি তার অন্তরায় বলে আমরা মনে করছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইসিকে অবশ্যই দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। নিরপেক্ষ ভূমিকা না পেলে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে।”

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, “এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের যে আস্থা ছিল সে আস্থা ক্রমশ ক্ষীয়মান। রিমোট কন্ট্রোল নির্বাচন কমিশনের কোথায় রয়েছে এটা আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত অজানা। এ ইসিকে অন্যরা পরিচালিত করলে পরিণতি নূরুল হুদার মতো হবে। নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারবেন না আপনারা। অন্য কেউ এটা পরিচালনা করে। আপনারা মানুষের সামনে সেটি প্রকাশ করুন। নিকট অতীতে আমরা নূরুল হুদা কমিশনকে দেখেছি। তার পরিণতি আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের মানুষ আবার কোনো মঞ্চস্থ নির্বাচনের দিকে যেতে চায় না।”

হাসনাত বলেন, “চব্বিশ পরবর্তী সময়ে জনগণের পালস না বুঝলে আবার বাংলাদেশ সংকটের দিকে যাবে। আমরা এই গুণ্ডা, এই গুণ্ডার রাজনীতি ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছি। রুমিন ফারহানারা যদি সেটি আবার বাংলাদেশে রিহ্যাবিলিটেট করতে চায়, তাহলে হাসিনার প্রতি তাদের যে আন্তরিকতা, হাসিনা যেখানে আছে তাদেরও সেখানে চলে যেতে হবে। রুমিন ফারহানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সিইসির পদত্যাগ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসী বলছে এনসিপি নেতৃত্বের জায়গায় আছে। মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন সদর উপজেলা ও বিজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপির রুমিন ফারহানা আমার বিজনগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে কেটে তার নির্বাচনী এলাকায় সরালো আশুগঞ্জের সঙ্গে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে একত্র করে। এজন্য আমি আমার এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী ইসিতে আপিল করেছি।”

এনসিপির এই নেতা দাবি করেন, “আমাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে যেন শুনানিতে অংশ না নিই। ইসিতেও আজ রোববার আমাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় এবং দুপুর ১২টার দিকে এক পর্যায়ে তারা ইসিতে প্রবেশ করি।”