কামরুজ্জামান কামুর ৬ কবিতা

প্রকাশিত : মে ২০, ২০১৯

রণরক্তমাতম

এ কি সন্ধ্যাতারা নাকি বাংলাদেশের বুকে যুদ্ধবিমান
ধেয়ে নামছে আকাশ তবু সঙ্গতিহীন হাহা হাসছে কেন
খাটো কালচে মানুষ? দিকশূন্যবুকের নিচে অন্ধপাথর
ফেটে চূর্ণ হয়ে দূরে ছিটকে পড়ে। রণরক্তমাতম!

কামে জর্জরিতের বুকে বীর্যপতনধ্বনি আছড়ে পড়ার
মতো শব্দ হলো এই দীনদুনিয়ার মধুচন্দ্রিমাতে।
যেন ক্ষিপ্ত ঘোড়ার ক্ষুরে অশ্বারোহীর নাভিচিহ্ন ছিঁড়ে
দূরে ছিটকেপড়া কোনো রক্তজবা নাকি সন্ধ্যাতারা?

নাকি বাংলাদেশের বুকে যুদ্ধবিমান এসে হামলা করে?
নাকি শেলক্ষেপণের ধোঁয়াধ্বস্ত হৃদয় ফাটে আর্তনাদে?
নাকি বংশপরম্পরাছিন্ন মাতাল হাসে মধ্যরাতের
ঘন অন্ধকারের দিনে সন্ততিদের কথা চিন্তা করে?

ভুলে জাপটে ধরেই দূরে ছিটকে পড়ি। গাইবান্ধা থেকে
এই পাংশু সিটির বুকে মাংস কাটার মতো ঐতিহাসিক
ঘোড়া দাবড়ে বেড়াই। কোনো চঞ্চলতার মদে মাতোয়ারা খুন
রগে রক্তমশাল হয়ে উঠছে জ্বলে। লোহা চাটছে আগুন।

লোহা তপ্ত করার কাজে ব্যাপ্ত কামারশালা গনগনে লাল
জাগো সন্দেহাতীতভাবে সর্বহারার বুকে ঢাল-তরোয়াল
রণরক্তমাতম! এই বাংলাদেশের বুকে যুদ্ধবিমান
আমি তৈরি করি। আমি বিশ্বজিতের বুকে রামদা কোপাই!

ধানবেচা লোক

যারা ধানবেচা লোক
ছোটো কুমড়া ফলায়
বড় জাংলি দিয়ে
তারা আসবে না আর
তোমাদের বাজারের
কোণাকাঞ্চিতে আর
তারা বেচবে না ধান
কোনো তিল পরিমান
দেশে খাদ্যেরও গান
পাখি গাইবে না আর
কেন কীটনাশকের
বিষে বাংলাদেশের
লোকে মরবে হেসে!
যদি ধান বেচে লাভ
কোনো নাই-বা তাদের
তবে বেচবে না ধান
হেন মোংলাকুটীর
লোকে ফটকাবাজির
গোয়া মারবে না আর!
তারা মাঠভরা ধান
তারা আমড়াবাগান
তারা গ্রাম থেকে এক
বড় পাইকারি লোক
ধরে রংপুরে যায়
সেথা হাটবাজারির
কথা কোন তা তা কয়!
এরা ধানবেচা আর
তারা ইংরেজি গায়
কেন বাংলাভাষায়!
কোনো ফর্মুলা নাই
বানে ঘর ভেসে যায়
নদীপারঘেঁষা লোক
তবু নৌকা চালায়
তারা নৌকাতে বউ
লয়ে ভিনদেশে যায়
যা যা পায় তা তা খায়
মহাজঙ্গলে ধায়
কালো ফল পেড়ে হায়
তারা বাচ্চাকে দেয়
হেন মাঘমাসে বাঘ
কেন চিৎকারিছেন
এরা কেউকেটা নয়
বাঘে ডাকলে হঠাৎ
এরা লাগবে তো ভয়!
তারা লাটসাহেবের
মতো বাটপেড়ে সব
খালি রক্ত চোষার
তালে ব্যস্ত সবাই
তারা চর্বি চাটার
কাজে ব্যস্ত সবাই
তারা ইংরেজি কয়
এরা ধানখেতে রয়

ধানহাটিতে মূর্ছা যাওয়া কৃষকের গান

ধানের চারাটি রোপণ করিয়া দেশে
কৃষক ভাইটি মারা গেল অবশেষে

এক মণ ধানে এক সের হায় গোস্ত
নাভি ছিঁড়ে খা রে নাভি ছিঁড়ে খা রে দোস্ত

কাদায় মাটিতে এই ধুধু প্রান্তরে
শূন্য বাতাস একা ক্রন্দন করে

দিশাহারা বুকে হাট থেকে ফিরে ঘরে
কী জবাব দিবে হৃদয় কাঁদিয়া মরে

মেয়েটা এবার কলেজে উঠেছে সবে
টাকার বিহনে কেমনে সে বড় হবে

ছেলেটাও যাবে গড্ডালিকায় ভেসে
বুকভাঙা এই সোনার বাংলাদেশে

হাহাকারে তার আকাশ গলিয়া পড়ে
বউটি ও-ঘরে ফাঁসি দিয়ে যায় মরে

এবার কী হবে ধানের জমির কোণে
বসিয়া কৃষক ভাবিছেন মনে মনে

যাহারা তোমার উদরপূর্তি করে
তব রোষানলে তাহারাই কেন মরে

বল দয়াময় বল হে বঙ্গত্রাতা
তবু এ কৃষক নয় কেন তোর ভ্রাতা

এত এত তোর কত লাগে আর মাগো
জাগো হে জনতা জননেন্দ্রিয় জাগো

বিকালবেলা

বিকালবেলা বাইরে যাওয়ার প্রাক্কালে
ভাবতেছিলাম যাইব কিনা
হঠাৎ যেন কী একটা গান পড়ল মনে
শালার বেটা আর ছাড়ে না

এই রজনী এগারোটায়
মাথায় আমার সে গান বাজে
এখন আমি কী করি মা
আটকে গেলুম বিকালবেলা

হাঁটতে যাওয়ার প্রাক্কালে

যা ঘটনা

যা ঘটনা শুনেছো তা
ঘটনাই নয় হে
লেবুপাতা দোলে তাই
হাওয়া মৃদু বইছে

যাওয়া লাগে। উঠি ভাই
চিন্তা করি গিয়া
এটা কোন ঋতু এলো
ফুলের গন্ধ নিয়া

ফুলের গন্ধ লইয়া যদি
চিন্তা করি শুরু
তাইলে পরে লাভ কী হবে
শুধাইলেন গুরু

শিষ্যদল ভক্তিভরে
ন্যূব্জ হয়ে প`ড়ে
নিদ্রাসম ঢলতে ঢলতে
সবাই গেল ম`রে

যে গান আমি গাইব গাইব

যে গান আমি গাইব গাইব
ভাবের কূলে ধাই হে
সে যে আমার এই ঋতুতেই
গাইতে হবে ভাই রে

সেই লালিমা এই বিকালেই
চাই গো আমার সেই ধ্বনি
এপার ওপার দু`পার করা
বাতাস বহে শনশনি