
বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে গ্রেফতার পাকিস্তানি আলেম আলি মির্জা
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৫
পাকিস্তানের ধর্মীয় বক্তা ও ইউটিউবার ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আলি মির্জাকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভিডিও বক্তব্যে তনি নবি মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে মামলা করে।
৩১ লাখেরও বেশি ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার থাকা ইঞ্জিনিয়ার মির্জাকে জনশৃঙ্খলা রক্ষা অধ্যাদেশের আওতায় ৩০ দিনের জন্য আটক করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ কাউকে আটক রাখতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’সহ অনেকের মতে, এই আইন অস্পষ্ট ও কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর হাতে এটি প্রায়ই দমননীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আলি মির্জা জেলম শহরের মেশিন মহল্লার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইউটিউবে ধর্ম ও সমাজ নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে আসছেন।
খোলামেলা ভাষার জন্য যেমন তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন, তেমনি বারবার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। তাকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টাও করা হয়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একটি বিশেষ সম্প্রদায় নবিকে ভিন্ন নামে সম্বোধন করে থাকে। কথা প্রসঙ্গে ওই নামটি মির্জা উচ্চারণ করায় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এটিকেই অবমাননা হিসেবে ধরে নেয় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করে।
আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মির্জার গ্রেফতার মূলত স্বাধীন কণ্ঠস্বর দমনের অংশ। লাহোরের আইনজীবী জে সাজ্জাল শাহিদি সামাজিকমাধ্যমে লিখেছেন, “এটি জনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় নয়, বরং সেসব কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার প্রয়াস, যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত আলেমদের আধিপত্যকে প্রশ্ন করার সাহস রাখে। অথচ সহিংস সংগঠনগুলো বারবার ছাড় পায়।”
ইঞ্জিনিয়ার মির্জার বিতর্কিত ইতিহাসও দীর্ঘ। ২০২০ সালে তিনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০২১ সালে জেলমের এক ধর্মীয় একাডেমিতে তার ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়। একই বছরে তিনি দেওবন্দি আলেম তারিক মাসুদের সঙ্গে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বিষয়ে তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
২০২৩ সালে বেরেলভি আলেম হানিফ কোরেশির সঙ্গে নির্ধারিত বিতর্কে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ম অবমাননার মামলা হয়। ২০২৪ সালের মহররম মাসে সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকাতে প্রশাসন মির্জাসহ আরও ১৭ আলেমের বক্তৃতা নিষিদ্ধ করেছিল।
একদিকে বিশাল অনলাইন অনুসারী, অন্যদিকে বিতর্কিত বক্তব্য— এই দুইয়ের টানাপোড়েনে ইঞ্জিনিয়ার আলি মির্জা এখন পাকিস্তানের ধর্মীয় অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত আলেমদের একজন হয়ে উঠেছেন। সূত্র: সামা টিভি ও দৈনিক ডন