মাসুদ খানের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০১৯

ধর্মাধর্ম

যেদিন গাছেরা ত্যাগ করবে তাদের বৃক্ষধর্ম
মিষ্ট নয়, ফল হবে কটু বা কষায়
আর সোজা না ফেলে সে ফল ফেলবে তির্যক ভঙ্গিতে
যেদিন আমের গাছে জাম হবে এবং তামার গাছে সিসা...

দস্যুকে তো শীলাচারী হলে চলে না
তবুও যেদিন সে ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে
হয়ে উঠবে সুশীল, পাদ্রি ও পরার্থপর
বকেরা যেদিন মশগুল হবে মাছেদের মঙ্গলচিন্তায়
সাপেরা অহিংস হবে, হরিণেরা তাড়িয়ে বেড়াবে সিংহদের...

যেদিন আয়না পরিত্যাগ করবে তার আর্শিধর্ম
দেবে না তো আর কোনো প্রতিবিম্ব
পাহাড় দেবে না প্রতিধ্বনি...

আর যত শীল ও দুঃশীল গতি অগতি কুশল অকুশল
আর যত অভিজ্ঞা ও সমাপত্তি, বারো রকমের বন্ধনযাতনা
সংসার সন্ন্যাস মোক্ষ মোহ কাম কৃত্য ঘাম মূত্র
ঔরস ও ধর্মাধর্ম পুরীষ পৌরুষ
সব একাকার হবে যেইদিন
সেদিন কোথায় কোন দূরে নিয়ে যাবে গো আমায়
ধর্মহারা বীতকৃত্য সূত্রহীন পুরীষবিহীন...

উল্লাসদিবস

আজ উল্লাসদিবস।
আজ বয়ে যায় নিম্নবর্গ প্রজাদের স্রোত।
ওই যে হাসিখুশি আলতাবিলাসী ডোমনি,
ইনি তার ডোম, চোলাইবিহ্বল।
বেতনহাতে প্রবাহিত ওই যে বাঁকাহাসি
মুর্দাফরাশ। ওই যে পানের-রঙে-রাঙা
মনে-মধু-জমা ঝাড়ুদার,
আর উনি কোতোয়াল, কব্জিতে অষ্টধাতুর ব্যান্ড,
ওই যে স্থূলাঙ্গ এক তরুণ খোজা
—আজ উল্লসিত সব। সব বৃষ্টিবিলাস
হাবসি কাফ্রি কাবুলিওয়ালা।

আজ ফাইলবিহীন বেতন-বোনাসের দিন।
আজ রাজন্যরা সব অধস্তন।
অমাত্যরা একটানা করণিক।

নাদুসনুদুস ক্রীতদাস আর কিশোরীমোহন দাশ
একযোগে ঘুমায় আজ পৌর জলাধারের ছায়ায়।
নগরপিতার গুরুগুরু নাসিকানির্ঘোষে হায়
বারবার ঘুম ভেঙে যায়।
ভিস্তিঅলা নিরুপায় ভিজে যায় জলে।

উনি এক রূপোপজীবিনী, সর্দি-লাগা কনিষ্ঠের হাত ধরে
বেড়াতে এসেছেন অন্য নতুন শহরে।
আর ওই যে উনি সিসাবণিক, ইনি গন্ধবিক্রেতা,
উনি হিসাবরক্ষক, ইনি কোষাধ্যক্ষ
এবং পাশেই গুঁড়িগুঁড়ি ইলশেগুঁড়ির দিনে
ইলিশচোরের মাধ্যমিক ভাই।
ওই যে কাত হয়ে, কাল্পনিক হয়ে, উৎকলিত হয়ে বসে আছেন,
উনি কবি, কবিরাজ।

আজ সবাই বাইরে বহির্ভূত বহমান ইনট্রানজিটিভ
নব্য রেশমজড়িত।

প্রতিষ্ঠান

এপ্রিলের সমান উঁচু ওই মনুমেন্ট
দুলে দুলে মাথা নাড়ে
গর্ভিণীর সান্ধ্য ইচ্ছার মতো, দূরে।

বীজায়ন প্রক্রিয়া, তারও পূর্বপার থেকে
জন্মদিন ডিঙিয়ে— দেহ তো আকারই পায়নি— তবু
ধেয়ে আসে সীমারেখা।
প্রকল্পের প্রভাবে জোরালো সোডিয়াম জ্বলে।

আলজিভ ভূতপূর্ব ঘনত্বে উঠে আসে
হিক্কায় ন্যক্কারে, রাত্রির।

ওই সটান প্রত্যালীঢ় ভঙ্গি তোর প্রধান নিষাদ,
জাফরান ওড়ে চূর্ণ-চূর্ণ রৌদ্রের সিলিকন।
মনুমেন্ট, তেজকম্প্র তোমার চুলের ইতিবৃত্ত।

কোন বর্গে জন্ম তবে এই শুষ্ক নিষাদের?

অগণিত রেখা, কত নীবিবন্ধ, জাহাজযন্ত্রণা...

প্রতিষ্ঠান উপচে উপচে পড়ে যায়
টুপটাপ জিরাফ ও যজ্ঞডুমুর।

বসন্তকাল

মাথা কেটে পড়ে গেছে, কণ্ঠনালি ফেটে ফিনকে উঠছে ঋতুরক্তলাভা,
লালের উল্লাসে আরো লাল হয়ে উঠছে পালকপুচ্ছডানা,
তবুও চলেছে উড়ে বনমোরগ, ছিন্নমস্তা, ডাল থেকে ডালে।

মোরগশীর্ষের আঁকাবাঁকা উচ্ছ্বাস থেকে আজ
ডিমের অস্থির কুসুমের মতো উৎফুল্ল সূর্যোদয়
ছোপ-ছোপ লাভাবিচ্ছুরণ...

ছিটকে ছিটকে শিমুলে মান্দারে গিয়ে লাগে ওই লাল
তুম-তানা-নানা ঘটিয়ে তোলে বনে বনে বিকল্প বসন্তকাল।