আলোকচিত্রী: সোনিয়া ইসলাম নিশা

আলোকচিত্রী: সোনিয়া ইসলাম নিশা

মিছিল খন্দকারের কবিতাগুচ্ছ

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৬, ২০১৯

একটা ভয়কে ডর দেখাচ্ছে অন্য একটা ভয়

পৃথিবীতে—
এমনই তো বৃষ্টি নামে
দুপুর তাতে;
একটা হাতের কাঙ্ক্ষা করে
দিন চলে যায় অন্য হাতের।
পথও যাচ্ছে ডুবে, এমন বারিধারা
বুকের মধ্যে বেড়ে উঠছে
রুগ্ন নিমের চারা।
ঝাপ্টা লাগে, পাপটা লাগে
দাগ থেকে যায় ঠোঁটে—
রৌদ্র ছিল, মেঘ হয়েছে
আবার রৌদ্র ওঠেন।
উঠতে গিয়ে পিছলে পড়ে
হচ্ছে এমন তরো
বলতে গিয়ে থাকছে কিছু
সবটা বলার পরও।
বলার যেন দরকারই নেই,
ভাত তো আছে, তরকারি নেই;
এমন যখন হয়—
একটা ভয়কে ডর দেখাচ্ছে
অন্য একটা ভয়!

নিশুতি পাড়া

মোড়ের দোকানে যে কিশোরেরা নিচু স্বরে কথা বলছে— তাদের  মধ্যে কেউ একজন কাল সকালে ইদ্রিস সার্ভেয়ারের ছোট মেয়ে সন্ধ্যাকে নিয়ে ভাগবে। ফলে থানা-পুলিশ হবে। আটক হবে ওদেরই তিন বন্ধু, যাদের একজনের মানিব্যাগে পাওয়া যাবে এক পুরিয়া গাঁজা।
এসব নিয়ে কানাঘুষায় আছরের নামাজ কাজা হবে পাশের বাসার বন্যার মা ও ওদের ভাড়াটিয়া কাকীর। খাটালে বসে বৌ গুনগুন করে কানতে থাকলে হঠাৎ গর্জে উঠবে অর্ধশায়িত বোজা চোখ সার্ভেয়ারের গলা, মাগী থাম।
শেষ বিকেলে ইলশা গুড়ি বৃষ্টি হবে। তাতে বাইরে তারে কাপড় ভিজতে থাকলেও তা তুলতে ভুলে যাবে তারা। রাতে সার্ভেয়ারের প্রেসার বাড়বে। তার স্ত্রীর বাড়বে সুগার। বোনের গোপন খবরে পরদিন ভোরে সন্ধ্যা এসে ঘাড় নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে ঘরের পেছনে, তার মুখ অন্ধকার।

শান্ত দিন

যেভাবে বাতাস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চলে আসে
সেভাবেই আসো।
শিশির দেখতে এলে ধরো,
সকালের রৌদ্র তুমি;
সম্পর্কের উজ্জ্বল বিভ্রান্তি—
এমনই তো ক্ষণস্থায়ী যাত্রা আমাদের।

যদিবা গন্তব্যের কথা আসে—
আকাশে আকাশে যতো ধাবমান মেঘ;
বাস্তুউদাসীন—
তাদের কোথাও কোনো যাওয়া নেই
ঝরে যাওয়া ছাড়া।
আমরাও তাই—
হয়তো আগুন
পরে ছাই।
যতোটুকু পাই তাতো উত্তাপে জাজ্বল্যমান শিখা,
ঈষৎ দূরত্ব থেকে আলো।
যেহেতু কারণ প্রকরণে নেই,
ফলে এসো
যেভাবে মুহূর্তে এসে অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকালো।

ভাস্কো দা গামা

দাদা মোর ভাস্কো দা গামা
সারেগামা পাধানি সাগামা
ভোর হলে ঘুম থেকে জাগা মা
তাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি ভাগা মা।
বুকে বাজে সাগরের দামামা
যাচ্ছি তো যাচ্ছিই থামা মা
সমুদ্র নাকি খাল পানামা
চরে উঠে গেছে তরী নামা মা।
দাদা মোর ভাস্কো দাগা মা।

বিলাই

কম চোদনে বিলাই ওঠে গাছে!
কার কপালে কখন যে কী আছে!

প্রতিধ্বনি

জটিলতর ফাটল জেগে উঠে
যাচ্ছে দূরে বেঁকে—
রেখেছো যার ব্যাপ্ত অন্ধকার
কোটরগত, সে কে!
পাথর ভারী— কাতরতার দিনে
টেনে তুলছো স্রোত
কথার ঢেউ ডোবাল নৌকাকে
যতোটা পর্বত।
তীব্র বাঁধা রণে বা জঙ্গলে
বজ্রভরা রাত
ভেঙে নামছে ঝড়ের বাতুলতা
ঋতুর আর্তনাদ।
চলছে ভীতি, ভূ-রাজনীতি; ক্রমে
গুপ্ত পরিণতি
দাঁতের ফাঁকে আমিষ বিঁধে গেলে
যুদ্ধ না সংহতি?
বন্য মনে ক্লান্তি নিয়ে ঠাঁই
ডাকলে ডাহুকস্বরে
জাহাজ থেকে দেখছে এসে হাওয়া
বাড়িটা নড়বড়ে।
বিকালবেলা বইছিল মন্থর
অন্যমনস্কতা
আসছে ফিরে প্রতিধ্বনি, ডাকের—
নিজেই ফলে শ্রোতা।