মেহেদি রাসেলের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ০৫, ২০১৯

নিয়ম

দেহ পড়ে আছে রাস্তার ঢালে, থ্যাঁতলানো মুখ তার
রাতে শোনা গেছে গুলির শব্দ, মানুষের চিৎকার
নিদ্রিত লোক পাশ ফিরে শোয়, শিশু জোরে কেঁদে ওঠে
কিশোরী মা তাই অপুষ্ট বোঁটা গুজে দেয় তার ঠোঁটে।
এরপর সব সুনসান যেন কোনো কিছু ঘটে নাই,

নিখিলের এই নিস্তব্ধতা ভাঙে শুধু শিশুরাই?

কত লাশ পড়ে নিয়মিতভাবে, কত লোক মরে যায়
তুমি নির্ভার, প্রতিক্রিয়াহীন, রাষ্ট্রীয় প্রহরায়।

এরকম হয় বাংলার মাঠে, নদী খাল বিল চরে
বাইরে বেরিয়ে অনেক মানুষ আর ফেরে না তো ঘরে।

প্রেমিক হয়ে ওঠো

এতটা প্রেম সুপ্ত ব্যথা এত আতশবাজি
হৃদয় ভরা দুর্বিনীত দহনসম সুখ
কোথায় ছিল এই জাগরণ জোছনাধারা, আলো
আজকে হঠাৎ মেঘে মেঘে বিদ্যুৎ চমকালো!

পথটা কঠিন, বাধাবিপত্তি, খানাখন্দে ভরা
পূর্বপ্রেমের প্রতিশ্রুতি এবং অনেক জ্বরা
তবু তুমি ডাক পাঠালেই ইচ্ছে করে, ছুটি—
হাত দু’খানি একটু বাড়াও, প্রেমিক হয়ে উঠি।

সন্ধ্যা

আমার কাঁধে রেখে গোলাপি বন্দুক
ছুড়ছে গুলি আজ সে কোন উজবুক!
যেখানে ফুল ফোটে, যেখানে সন্ধ্যায়
বেয়াড়া হাঁসগুলি পুকুরে সাঁতরায়;
যেন বা তাড়া নেই কোথাও ফিরবার
গুলির শব্দেই দুনিয়া জেরবার—
তথাপি বুনোফুল আবার ফুটে ওঠে
আবার মুখরতা তোমার দুই ঠোঁটে।

আমার কাঁধে নিয়ে গোলাপি বন্দুক
তোমার কাছে তাই রয়েছি নতমুখ।

ফেরা

তোমার দিকে যাব বলে বাড়িয়েছিলাম পা
হঠাৎ দেখি প্রশ্নবোধক, মস্ত বড় `না`
রাস্তাজুড়ে বাধার দেয়াল, খানাখন্দ, হা—
খল সামাজিক মানুষ বলে, `এবার ফিরে যা`

ফিরব বলে বেরোইনি এ কণ্টকিত পথে
ত্রিকাল ঘুরে এসেছি আজ ভালোবাসার রথে
কে আটকাবে? রাষ্ট্র, সমাজ? ভাড়ের ভনিতা?
তোমায় নিয়েই ফিরব জেনো, একলা যাব না।

গান

যদি সে দিঘির টলোমলো জলে
বাতাস বইতে থাকে
যদি সে রোদের নিরালা দুপুর
বেদনা জমিয়ে রাখে—

যদি সে জানালা একাকী বিষাদ
গোপনে লুকায় তার
ছায়ঘন বনে পাখি ফিরে গেলে
বৃথা সব হাহাকার।

যদি আরশিতে কুয়াশা ঘনায়
তোমারে না যায় চেনা
যদি প্রেম আসে দু’কূলে আবার
তুমিও কি ভাসবে না?

যদি না জানার গোপনীয় দিনে
ব্যথিত বকুল ঝরে—
কিছু ঘ্রাণ তার বাতাসে ছড়িও
কিছু রেখো অন্তরে।