শ্রেয়া চক্রবর্তীর ৪ কবিতা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯

সঙ্গ

অনেক নিবিড়তায় কিংবা
অবশ্যম্ভাবী দূরে গিয়ে বহুবার
দেখেছি তোমায়।
অন্তর্লীন স্রোতে মিশে
রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের বিশ্বাস
ভেঙ্গে গেছে যখন ফ্যান্সি ফুলদানির মতো
হিমবাহের ঢালে প্রতিটি টুকরোই তার
হৃদয়মথিত তাপে লীন হয়ে গেছে।

তোমার পাশে দেখেছি নিজেকে
রূপালী অন্তরীক্ষে ভেসে
নাইটল্যাম্প জ্বলা ঘরে কত কি স্বপ্ন ওড়ে
হলুদ রিবনের মতো।
এসবই আমার দিবাস্বপ্নে এসে
মজিয়ে রাখে ভীত দুপুরের মজ্জাগত বিভ্রম!

এ`পথ তবে কোথায় গিয়ে মেলে
না জেনেই বুঝেছি সেদিন
পথ নয়, পথের ধারে গাছ ফুল জলাশয়
ন্যুব্জ আকাশ এসবই অধিক অর্থবহ হয়।
চলো তবে, যে এসেছো আমাকে মুক্তি দিতে
হে দীপ্যমান—
চলো একসাথে বুড়ো হওয়া যাক।

যদি প্রেম দিলে না প্রাণে

দেখা না হলে একদিন
ছিল যাদের আলো ফোটার অপেক্ষা
তাদেরও দিন অতিক্রান্ত হবে,
পাশাপাশি দুজন
অথচ এ ওকে দেখতে পাবে না আর
আলো নেভানোর ছলে...

যারা স্পর্শাতীত মোহে একদিন
এসে পড়েছিল ঝড়ে ওড়া পাতার মতো জাপটিয়ে
তাদেরও রাত কেটে যাবে
উল্টোপিঠে মুখ।

যারা ফিরেও তাকাতো না পরিযায়ী দিকচিহ্নে
তাদের চোখ চলে যাবে দিনগত অভ্যাসে
শুধু চোখ নয়
মন ও শরীর
অন্যত্র অতিদূর!

যারা কথা না বলে ঘুমাতো না
গাছ ফুল সমুদ্রের—
কেবল চাল ডালের হিসেব করবে একদিন
লোহা লক্করের
বাচ্চার স্কুলের

যারা প্রেমকে অমোঘ বলে জেনেছিল
তারাও জানবে,
প্রেম আসলে ক্ষুধাতুর শিশু
ভাত জল না পেলে যার মৃত্যু হয়...

যারা একদিন রোদে বৃষ্টিতে
এ ওর মাথায় ছাতা ধরবে বলেছিল,
ছাতাটি শিখণ্ডি করে
জল আটকাবে দুজন ভীষণ বৃষ্টিকাতরতায়,
বৃষ্টিতে ভিজবে বলে একদিন
যারা ছাতাটি উড়িয়ে দিতো যুগপৎ
হেসে!

হে নীরবতা

আকুল তোমার হে নীরবতা ইচ্ছেপ্লাবী
চলে যাওয়ার আগে
ঢেলো বালতি বালতি জল
পা ভিজুক আমার ভিজে যাক অর্ধনাভি
তবুও হেঁটে পার হয়ে যাব
ওই ভাঙা নদীটির পার ঠিক আধাআধি
বাকি অর্ধেক সেও আমাকেই পেরোতে হবে
জানি, জেনেছি এতদিনে
তাই ভর্ৎসনা করি না,
এই যে উন্মুখ ফিরে যাওয়া আমাদের
শত হলাহলে
সে কেবল এক অনন্ত মৃত্যুভয়
অকস্মাতের যোনি থেকে!

আগুন পোহাই

চোখে চোখ ঘেষে চলে যাওয়া তীব্র বিদ্যুৎ
আঙুলে আঙুল ছোঁয়ানো আলতো আগুন
তোমার সাথে বৃষ্টি ভিজে গলির ভেতর তীব্র চুম্বন
বুকের পশমে মুখ
কলার টেনে ধরে হৈ হৈ হা হা হাসি
কাঁধের ওমে ঠোঁট গেঁথে রেখে বৈকালিক উষ্মা
নাভিপদ্মে হুলুস্থুলু বাঁধানো সাপ
থৈ থৈ আশরীর অট্যহাসি—

প্রিমরোজ ওয়ে ট্যু দ্য এভারলাস্টিং বনফায়ার
পার হতে হতে হঠাৎ চমকে তাকানো
চোখ জানে যা কিছু সেই পরম ঐশ্বর্যের মানে
কান বোঝে
হঠাৎ স্তব্ধ করে দেয়া ভালোবাসার কিছু নৈঃশব্দ্য
কিংবা দুচার শব্দে সুতীব্র উন্মোচন
ত্বকের প্রতিটি রোম সে খবর রাখে!
ইঙ্গিত যা সলজ্জ তোলপাড় পাকায়
স্নায়ুতে শিরায়...

আগুনে পুড়তে জানে যে রোজ অহরহ
বোঝে সেই
প্রেম বলতে জয় করে শুয়ে পড়া নয়!