হৃদয় ছোঁয়ার দিন

উপন্যাস ২

সাজ্জাদ হায়দার

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯

হিট এন্ড রান, গেরিলা যুদ্ধের মূলতত্ত্ব। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করতে হবে। তবে তার আগে চাই শহরকে ঝাঁকুনি দেয়া। এজন্য চাই কার্যকর প্রপাগাণ্ডা। এ তত্ত্ব প্রয়োগ করে মাও সে তুং চীনে সফল বিপ্লব করেছেন। চীনের মতোই পূর্ব-পাকিস্তান কৃষিভিক্তিক দেশ। সুতরাং বিপ্লব না হয়ে যায় না! ছটটুদের দল মাও সে তুং তথা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই হবে। চীন যে এখন পাকিস্তানের শাসকদের চটাবে না, এই হিসাবটা ছটটুদের ছিল না। বর্তমান বিশ্বে নিঃসঙ্গ চীনের একমাত্র মিত্র পাকিস্তান। ওদের ধারণা, নকশালবাড়ি আন্দোলনকে চীন যেহেতু সমথর্ন দিচ্ছে, ভবিষ্যতে ওদেরও তেমনি সমর্থন দেবে।

ঊণসত্তুরের গণ অভ্যুত্থানের পর প্রায় প্রতিটি মানুষই এখন রাজনীতি সচেতন। একজন সাধারণ রিকশাচালক কিংবা মুটে মজুর নিজেদের দুরাস্থার জন্য দায়ী করে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসন আর শোষণকে। একজন কেরানি অবাঙালি কর্মকর্তার অনিরপেক্ষতার প্রতিবাদে সহজেই সোচ্চার হয়। ঊনসত্তুর জনগণের চেতনায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। বুর্জোয়া দলগুলো জনগণের এই চেতনাকে ভয় পায়। অথচ এই চেতনাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। এজন্য ইয়াহিয়ার সাথে অপোষে এরা পিছু পা নয়। বুর্জোয়ারা একটা নির্বাচন করে এখন পাকিস্তানকে রক্ষা করতে চাচ্ছে। বিপ্লবীদের কাজও বেড়েছে। বিপ্লবের মাহেন্দ্রক্ষণ তো এটাই!

সুতরাং এখন যদি খোদ ঢাকায় অ্যাকশন চালানো যায় তবে তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। প্রথমত নির্বাচনমুখি দলগুলো ভড়কে যাবে। দ্বিতীয়ত স্বাধীনতাকামী তরুণ-যুবকগোষ্ঠি খুব সহজেই আমাদের দলের প্রতি আকৃষ্ট হবে। কিউবার বিপ্লব শুরু করেছিল মাত্র বিরাশিজন বিপ্লবী। সুতরাং বিপ্লব অনিবার্য।

দীর্ঘ বক্তব্যর পর সিরাজুল হক থামলেন। বুড়িগঙ্গা নদী অপর তীরে জিঞ্জিরার এক বস্তি ঘরে এই বৈঠক চলছে। ছটটু আর সিরাজুল হক ছাড়াও আরও ছয় তরুণ গভীর আগ্রহে সিরাজুলের কথা শুনছে। সিরাজুল ছটটুর মুখের দিকে তাকালেন, কমরেড পলাশ আপনি কিছু বলুন।

সত্যি বলতে কি, হাতের সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে দীর্ঘ টান শেষে ছ্টটু বলল, অনেক আগেই আমাদের অ্যাকশনে যাওয়া উচিত ছিল।
গুড। সিরাজুল হক ফের শুরু করলেন, ঢাকায় আমাদের টার্গেট এমন হতে হবে, যা পাকিস্তান সরকারের জন্য স্পর্শকাতর অথচ যার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। আর কোনোভাবেই প্রাণহানি ঘটানো যাবে না। জানমালে ক্ষতি হলেই সরকার আমাদের ডাকাত হিসাবে চালিয়ে দেবে, জনগণও বিভ্রান্ত হবে। সিরাজুল হক ঘড়ি দেখলেন। তাহলে আজ এ পর্যন্ত। টার্গেটের ব্যাপারটা আগামী পনের দিনের মধ্যে ঠিক করতে হবে। আপনারা যথা সময় ব্রিফিং পাবেন।

সিরাজুলের কথায় তরুণদের মনে শিহরণ জাগে। এই অ্যাকশন সফল হলেই নুতন পথের যাত্রা শুরু হবে। নিজেদের সেই দুর্গম যাত্রার অভিযাত্রী মনে হয়। বিপ্লব তাহলে শুরু হচ্ছে! সিরাজুল হক উঠে দাঁড়ালেন। হাতে দামি ব্রিফকেস। চোখে বিদেশি সানগ্লাস। বামপন্থি নেতার পরিবর্তে একে অনায়াসে ফিল্ম স্টার হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। চলবে