কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’

মানুষ অসুস্থ থাকলে স্বাভাবিক বোধ লুপ্ত পায়। অনেক সময় খুব বাস্তববাদী মানুষেরও চেতনা শূন্য হয়। তিন মাস ধরে নিতিশ বাবুর পিতৃত্ব চেতনাশূন্য ছিল। তিনি নিজের যন্ত্রণার মাঝে আকণ্ঠ ডুবে ছিলেন। আজ নিতিকে কাছে ডাকলেন।

চার বছর আগে এই দিনে সন্ধ্যাবেলা হাসপাতালে ভর্তি হলাম। পরের দিন সকাল সাড়ে ন’টায় ওটি বুক করা ছিল। কেবিনে কিছুক্ষণ থেকে ফিরে গেছিল সুদীপ্ত। তখন বোধহয় রাত আটটা-ন’টা হবে।

মানুষের জীবন থেকে সময় বড্ড দ্রুত পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একমাস চলে গেল। বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। চারদিকে গাছপালা বৃষ্টির জলে সতেজ হয়ে উঠেছে।

বাপের আমলের কিছু শিষ্য সাগরেদ আছে, আমারও কিছু জুটেছে, তারা ভক্তিশ্রদ্ধা করে, এসব ফেলে আসব কি করে? আর মন্দিরের প্রণামী, শিষ্যদের দক্ষিণা, এসব মিলে আয়-রোজগারও তো একেবারে কম হয় না।

রিমি দুপুরের খারার খেতে এসে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে পড়ল। একটু মন খারাপও হলো। একটা অভিমান দানা বাঁধল। পরক্ষণেই মনে হলো, কার উপর অভিমান করবে? কোন অধিকারে?

বাউল রণেশ ঠাকুরের বাউলগানের আসরঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুদিন আগে। আমরা সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীরা নীরব, নিশ্চুপ। যেন কিছুই ঘটেনি। যেন ওটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে।

মন্দিরের মর্মর পাথরের মূর্তি এ প্রার্থনা শুনল কিনা নিতি সেটা বুঝল না, উপরের সেই অদৃশ্য পরমপুরুষ একথা জানল কিনা নিতি সেটাও বুঝতে পারল না। অনেক কিছু না বুঝেও নিতির মন হালকা হলো।

আসমা তেমন সুন্দরী নয়। আসমা থেকে ঢের সুন্দরী মেয়ে এ পাড়ার অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তবুও সুমন সবার আগে এ ঘরেই আসে। এখানে এলে তার লাম্পট্যে মরিচা ধরে। কেমন যেন বোকা বোকা হয়ে যায়।