কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’
আগস্ট ১৭, ২০২৫
দুপুরে দাদির হাতের রান্না খেয়ে আমরা তিনজন ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছি। তখন এক যুবক দোতলায় উঠে আসেন। যুবকের নাম হুমায়ূন

তৃষ্ণাকুমারী
সন্ধে নামলে ছায়াবুড়ি গ্রামে ঢোকে। এরপর কুমারী মেয়েদের ফুসলাতে থাকে, চল ওই জঙ্গলে যাই, চল ওই জঙ্গলে যাই। জঙ্গলে কী আছে? প্রশ্ন করে এক সৈন্য। হরেন বলল, ওই জঙ্গলেই তো ছায়াবুড়ির বাড়ি। যেখানে দিনের বেলা গেলে কেউ বাড়িটাড়ি কিছুই দেখতে পাবে না। কিন্তু বাড়ি ঠিকই আছে। রাতের বেলা গেলে দ্যাখা যায়।
মার্চ ২৩, ২০১৮

তৃষ্ণাকুমারী
এইটুকু এক ঘর, নড়াচড়ারও তেমন জায়গা নেই। দিন আর রাতের আবর্তন কিছুই তারা জানতে পারেন না। যখন প্রহরী এসে মাটির প্রদীপটা জ্বেলে দিয়ে যায়, শুধু তখন বোঝা যায় বাইরে এখন রাত নেমে এসেছে। প্রদীপ জ্বেলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে প্রহরী চলে যায়।
মার্চ ২২, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
এত বিশাল মানুষদের বহর নিয়ে যুগের পর যুগ আবর্তিত এই পল্লীর লোকদের খানাপিনার ধরণ কেমন? ঝুমুর বাড়িঅলীর সাত-আটটি টিনের ছাপড়া ঘর। তার একটিতে ঝুমু বসবাস করে। রান্নাবান্না করে খাবার ব্যবস্থা এখানে খুবই সংকটাপন্ন। ঝুমু এখানে রান্নাবান্না করে না, সে পাশের এক হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে প্রতিদিন খায়।
মার্চ ২২, ২০১৮

তৃষ্ণাকুমারী
গুপ্তঘর। চারদিকে ছড়ানো-ছেটানো নরকঙ্কাল। রাজা তেপইয়ের পূর্ব-পুরুষের কেউ একজন এই অন্ধকুঠুরিটা বানিয়েছিলেন। লোকমুখে শোনা যায়, রাজদ্রোহীদের ধরে এনে এই অন্ধকুঠুরিতে আটকে রাখা হতো। কোনও খাবার দেয়া হতো না। না খেতে পেয়ে এভাবে বন্দিদের মৃত্যু হতো। অসংখ্য কঙ্কাল ঘরটার মধ্যে।
মার্চ ২১, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
সমাজের কথা চিন্তা করলে তো পেট ভরবে না। পেট ভরাতে অর্থ দরকার। খাবার দরকার। যেখানে দু-বেলা দু-মুঠো ভাত পাবে সেখাই আবাস গড়ে তুলবে সমাজের নিঃগৃহীত বুভুক্ষু মানুষ। তাই তো বিদেশ যাবার পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এখানেই ব্যবসা গেড়ে বসেছে দেশের প্রান্তিক কিছু মানুষজন।
মার্চ ২১, ২০১৮

তৃষ্ণাকুমারী
তার চোখ ভানুর খোঁজে এদিক-ওদিক ঘুরতে লাগল। হঠাৎ চোখে পড়ল, বাইরে ফুলবাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভানু। সঙ্গে সোনালি। সে এগিয়ে গেল। কেমন আছো ভানু? টলটলে সেই চোখ ভানুর। আর মুখশ্রী। তবে বিষণ্ন। কী রকম যেন ক্ষয়াটে দেখাচ্ছে তাকে। জবাব দিল না ভানু। চেয়ে রইল আলোকবচন্দ্রের মুখের দিকে।
মার্চ ২০, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
ঝুমু মেয়েটি অনেক সাদাসিধে মন-মানসিকতার। সে সব কথা অন্যের মুখের উপর অবলীলায় ছুড়ে দিতে পারে। এটি তার সহজাত অভ্যাস। ওড়নাটা কেন জানি তার বুকের ওপর থাকতেই চায় না। মানুষ কতই না স্বপ্ন দেখে, আহারে! আমি যদি মেয়েটির ঠোঁটের লিপিস্টিক হতে পারতাম!
মার্চ ২০, ২০১৮

তৃষ্ণাকুমারী
রাজা বললেন, তুমি ধন্য যুবক। তুমি সুপুরুষ। রাজকুমারী ভানু তোমারই যোগ্য বটে। নাকি মন্ত্রীমশাই? মন্ত্রী রাজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বলে উঠলেন, সে আর বলতে। এ ছেলের বীরত্ব আছে, বলতেই হবে। রাজ্যের এতগুলো সৈন্য যেখানে কিছুই করতে পারেনি, এ ছেলে মাত্র ক’দিনেই তা করে দেখিয়ে দিলে।
মার্চ ১৯, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
খানকির পোলা টাকা নিয়া সেই যে গেল, আর ফিরে আইল না। ফোন-টোন সব বন্ধ। আমাগো বেশ্যার টাকা মাইরা খাইতেও তোমাদের বিবেকে বাঁধে না। শরীর বিক্রির কষ্টের টাকা। তোমরা শালা মানুষের জাত না। আমাগো শরীর সাত-দিন রক্তে নাপাক থাকলেও তোমরা আমাগো ছাড় না। তোমরা আসলে কিসের জাত?
মার্চ ১৯, ২০১৮

তৃষ্ণাকুমারী
শুরু হলো আলোকচন্দ্রের নদীপথের জীবন। সে বসে থাকে বজরার ছাদে। চোখ রাখে চারদিকে। মাঝেমাঝে নিচে নেমে আসে। একটু তদারকি করে। কখনও খাওয়া-দাওয়া করে। এরপর আবার উঠে যায় ছাদে। টলটলে নদীর জল। এই জলের ওপর ভাসমান জীবন ভালোই লাগে তার। থেকে থেকে মনে পড়ে ভানুর মুখ।
মার্চ ১৮, ২০১৮