কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’

মেয়েটির জীবনে এতকিছুর প্রয়োজন ছিল না হয়তো। একজনকে ভালোবেসেই জীবনটা কাটিয়ে দেয়া যায়, যেত। এখন মনে হয়, ভেতর ভেতর মেয়েটি খুব থিতু সংসারী একটা মানুষ। কেবল যার ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা গগনচুম্বী।

যারা অনেককে অনেক তেল মেরে ওপরে ওঠে, কিছুটা ওপরে ওঠা গেলেও এই ওপরে ওঠার মধ্যবর্তী পথের যে অভিজ্ঞতা, তা নিয়ে তারা নিজেরাও খুব বিক্ষুব্ধ থাকে।

সাহিত্যের আঙিনাতেও দেখা মিলছে ইউনিভার্সাল দাদাদিদি গোছের, ‘দেখে নেব শালা` অ্যাটিটিউড নিয়ে ঘোরা লেখক-লেখিকাদের যাদের ক্যাচলাইন অনেকটা এইধরনের— ‘লিখবো এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে!’

কোথায় কবে কেন কার ফাঁসি হয়েছিল, সে খবর জেনে ওঠার অনেক আগেই তাকে অপরাধী বানাবে তার সমাজ তার পরিবার তার রাষ্ট্র, যা হলো গিয়ে স্বয়ং অপরাধীর আঁতুড়ঘর।

ঘরে ঢুকেই দেখি, দু’দিন আগের ছাতু খাওয়ার গ্লাস গড়াগড়ি যাচ্ছে। বিছানায় সর্বস্ব ছড়াছড়ি। চাদরটা টান দিতেই এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ল চেটেপুটে সাফ করে খাওয়া খেজুরের বিচি।

সবাই দূরে গেছে কম্যন্ডার স্যার, আপনে না ঠেক্যাইলে সবাই মরতাম। কিন্তু আপনার পা তো শেষ কম্যন্ডার। মণ্ডল স্যার আমারে পাঠাইল খালি হাতে। না, গ্রেনেড আছে দুইটা।

এখানে শুয়ে থেকেই ছটটু কিছুক্ষণ আগেও গুলি ছুড়েছিল। ওদের পুরো দলটা দ্বিমুখি আক্রমণে পড়েছিল। তারপর... মনে পড়ছে, তখন আঁধার ছিল। আকাশে কুয়াশা ঢাকা চাঁদ ছিল। তারপর আকাশে সূর্য এলো কখন, না মনে পড়ছে না।

এ এলাকায় নভেম্বরের প্রথম থেকেই হিমালয়ের উত্তরের বাতাস বইতে থাকে। আর এখন নভেম্বর শেষ হতে চলেছে। শীত ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এ মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ জোরদার হচ্ছে।