কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’
আগস্ট ১৭, ২০২৫
দুপুরে দাদির হাতের রান্না খেয়ে আমরা তিনজন ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছি। তখন এক যুবক দোতলায় উঠে আসেন। যুবকের নাম হুমায়ূন

বেশ্যাকন্যা
সাগরদের বাড়ি থেকে কয়েকটি বাড়ির গলি পেরুতেই চোখে পড়ল, দুজন মধ্যবয়সী পুরুষকে। তারা সম্ভবত নতুন এসেছে এই পল্লীতে। তাদের চেহারায় আনন্দের উচ্ছ্বাস। আকাশে দমকা হাওয়ার দুর্বার ঝড় থেমে যাবার পর প্রকৃতিতে যেমন স্নিগ্ধ নির্মল বাতাস বইতে থাকে, তেমনি নতুন আসা দুই অতিথির চোখমুখে প্রশান্তির হাসি।
এপ্রিল ১৬, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
সবাই আমাগো বেশ্যা কয়। আমাদের নিয়ে ভালো কিছু ভাবার সময় কোথায় সভ্য সমাজের? আমাদের নিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়। টাকা উপার্জন করতে চায়। অনেক কঠিন একটা পৃথিবী। আমার মেয়ে আমার সামনেই খদ্দের নিয়ে ঘরে ঢুকছে। ছেলেও এই পেশার সাথে কোনও না কোনোভাবে জড়ায়ে পড়ছে।
এপ্রিল ১৫, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
রুপালি চা আনতে বাইরে গেল। আমি এবার অনেকটাই শ্রান্ত মনে বিছানায় শুয়ে থেকে ভাবছি বিভিন্ন কথা। ঘরের মধ্যে এক মন মাতানো গন্ধ মৌ মৌ করছে। গন্ধটা নিশ্চয় গোলাপের হবে। এয়ার ফ্রেসনারটি স্প্রে করার পর রুপালি ডেসিনটেবিলের উপরই রেখে দিয়েছে।
এপ্রিল ১৪, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
দৌলতদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীর নারীদের প্রধান খদ্দের হচ্ছে ট্রাক ড্রাইভার। সাধারণত ফেরিঘাটে মাল বহনকারী ট্রাকের থাকে প্রচুর জ্যাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রাক ড্রাইভাররা তাদের ট্রাক নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট পাড়ি দেবার সময় দিনের পর দিন অবস্থান করে। এ অবসরে তারা ছুটে যায় এই নিষিদ্ধ পল্লীতে।
এপ্রিল ১৩, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
আমি সাগরকে নিয়ে বিভিন্ন গলিপথ পেরিয়ে তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সাগর বেশ কিছুদিন থেকে বলছিল, মেহেদী ভাই, আম্মা আপনারে খুব দেখতে চায়, কবে যাবেন? তারই ধারাবাহিকতায় আজকে সাগরের বাড়িতে আসা। সাগরের মা ছিলেন এ পল্লীর একজন যৌনকর্মী। এখন তিনি বাড়িঅলা।
এপ্রিল ১১, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন জায়গাতে যাওয়ার জন্য নিষিদ্ধ পল্লীর নারীদের খালি পায়ে হেঁটে যেতে হতো। বাজার কিংবা মার্কেটে যেখানেই তাদের প্রয়োজন থাকুক না কেন, যৌনকর্মীরা তাদের পায়ে সান্ডেল পরে বাইরে যাবার অধিকার ছিল না। মারা গেলে তাদের জানাজা ও সৎকার করার সুযোগও ছিল না।
এপ্রিল ১০, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
খদ্দেরের আকাল পড়লে মাঝে মাঝে বয়স্ক বেডাও ঘরে তুলি। কিন্তু মোটা ভুড়িঅলা কখনও তুলি না। কিছুদিন আগে আমাদের এক বড় বোন এক মোটা ভুড়িঅলা বেডারে নিয়ে আমার পাশের ঘরে তুলছিল। ওই বেডা বইতে গিয়েই মারা গেছিল... হেই বেডা মরার পর বিচ্ছিরি কারবার। পুলিশ আইসা ধরে নিয়ে গেছিল হেই আপারে।
এপ্রিল ০৯, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা চা পান করছি। অনেকেই আমাদেরকে আড়চোখে দেখছে। পাশেই একটি ১২-১৩ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে জ্বলন্ত সিগারেটের নির্গত ধোঁয়ার কুণ্ডলি নির্বিকার মনে নির্গমন করে চলেছে। মেয়েটি তার জীবনের সকল কালিমালিপ্ত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটানোর চেষ্টা করছে যেন জ্বলন্ত এই সিগারেটের ধোঁয়ায়।
এপ্রিল ০৩, ২০১৮

বেশ্যাকন্যা
আমরা গলির মুখ থেকে একটু এগিয়ে একটা চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দোকানটি বেশ ঘিঞ্জি। চায়ের পাশাপাশি এখানে ভাত খাবারও ব্যবস্থা আছে। দোকানটি নারী-পুরুষের কলকাকলিতে মুখর। ভেতরের জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেয়। দুটো ছোট ছেলে কাস্টমারকে সার্ভিস দিতেই ব্যস্ত।
এপ্রিল ০২, ২০১৮