কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’

নারীময় জীবন আমার। নারীরাই আমার জীবনীশক্তির রসদদাত্রী। নারীপ্রভাবিত জীবন আমার। বলার প্রয়োজন পরে না যে আমার জীবনে নারীর অবদান অপরিসীম।

ষাটের দশকে বিনয় মজুমদারের সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হয়, তখন আমিও জানতুম না যে, ‘ফিরে এসো, চাকা’ বইয়ের চাকা হলো গায়ত্রী চক্রবর্তী নামের একজন বিদূষী। বিনয় মজুমদার দুই বছরের জন্য হাংরি আন্দোলনে ছিলেন।

একজন কবির সঙ্গে জনসাধারণ কেমনতর আচরণ করে তা আমরা কাজী নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে দেখেছি। তাঁর জন্মদিন এলে তাঁকে বিয়ের বরের মতন কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হতো।

যে লোকটির নিজের সম্পর্কে এই ইতিহাসবোধ আছে, তাঁকে কেমন করে ‘পাগল’ বলা হয়? এ যেন উস্কো-খুস্কো চুলের জন্য আইনস্টাইনকে পাগল বলার মতন।

‘ফিরে এসো, চাকা’, বইটির অসাধারণ কবিতাগুলো সত্ত্বেও বিনয় মজুমদারকে সেই ধরণের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল না, যেমন শক্তি-সুনীল শক্তি-সুনীল ধুয়ো তুলে একটা প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্মে তাঁদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিল।

একটা `তুই তোকারি`র প্রেম আমার করে ওঠা হলোনা ঠিকমতো। এই তো আশপাশে দেখি-শুনি হামেশাই, ‘এই তোকে না আজ ঘ্যামা লাগছে... উম্মা’। ভিড়ের মধ্যে, ‘এই তুই ওদিকে কি দেখছিলি রে... চল আজ বাড়ি।’

জীবনানন্দের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা ‘বনলতা সেন’-এর যদি উল্লেখ করি তবে দেখা যাবে তা সম্পূর্ণ কবিকল্পিত, তা অবলোকিত বাস্তব নয়, যা আমরা বিনয় মজুমদারে পাই।

১৯৮২ সালে ‘কোনো গোপনতা নেই’ শীর্ষক সাক্ষাৎকারে ‘বাস্তব কবিতা বলে কিছু হয় কি?‘ প্রশ্নের উত্তরে বিনয় মজুমদার বলেছিলেন, “পুরোটাই— কবিতার প্রত্যেক শব্দ, প্রত্যেক বাক্য, বাস্তব জগৎ, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া।”