ঋত্বিক ঘটক: পাগলাগারদের শেকল ভেঙে মৃত্যুর মাঝে মুক্তি

নারীদের দুর্দিনের কথা ভাবলে সকলের মন খারাপ হয় যায় এখনো। রামমোহন আর বিদ্যাসাগর প্রমুখ ভদ্রঘরের নারীদের মুক্তির জন্য কতটা স্বার্থ ত্যাগ করেছিলেন আর কতটা ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিলেন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করা সেভাবে সম্ভব নয়

মৃত বেনের স্ত্রী সহমরণে যাবার সংকল্প করেছে। সতী হবে, সতী হবে একটা সোরগোল পড়ে গেল। তারই জন্য এত আনন্দ। স্থানীয় হাকিম মহিলাকে আদালতে ডেকে পাঠিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে সহমরণে কোনো লাভ নেই

বিদ্যৎজনের চিন্তাভাবনা, সমাজসংস্কার ও নব্যধনীদের সৌখিনতা, সেই সাথে বাবু সংস্কৃতির পাশাপাশি ভিন্ন একটি সংস্কৃতিও সে সময়ের কলকাতায় বহমান ছিল। এটা ছিল কলকাতার নিজস্ব ধাঁচে গড়ে ওঠা লোক সংস্কৃতি।

রাজারাজরারা রাত্রে নিজ বিবাহিত স্ত্রীর মুখ দেখতেন না। বাড়ির প্রধান আমলা, দারওয়ান, মুচ্ছুদ্দিরা যেমন হুজুরের বিষয়কর্ম দেখেন, স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণের ভারও তাঁদের উপর বর্তায়। সুতরাং তাঁরা ছাড়বেন কেন?

মধ্যযুগের বাংলার নগরের অন্যতম ভূষণ ছিল বারাঙ্গনাপল্লী। রাজার পারিষদ ও আমলা-অমাত্যরা প্রকাশ্যে বারাঙ্গনাগৃহে যাতায়াত করতো, সকলে মিলেমিশে আমোদ আহ্লাদে অংশ নিতো। মধ্যযুগে তা ছিল পৌরুষ ও আভিজাত্যের প্রতীক

গভীর আঁধার কেটে ভেসে ওঠে আলোর গোলক/সমস্ত পৃথিবী যেন গায়ে মাখে জ্যোতির পরাগ/তাঁর পদপ্রান্তে লেগে নড়ে ওঠে কালের দোলক/বিশ্বাসে নরম হয় আমাদের বিশাল ভূভাগ।

কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে একবার এক বাঁদরের বিয়ে দেয়া হয়েছিল বেশ ধুমধাম করে। এই বিয়েতে এক লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। বানরকে মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়ে পাল্কীতে চড়িয়ে একদল বাঈজী বরের পেছনে দাঁড়িয়ে গান গাইতে ছিল।

বাবু সম্পর্ক চমৎকার সব কথা লিখেছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। বাবু মাত্রেই ধনী কিন্তু ধনী হলেই বাবু হয় না। রামদুলাল সরকারের টাকা ছিল কিন্তু বাবু হননি। তিনি অতি দরিদ্র থেকে বাংলার শ্রেষ্ঠ ধনী হয়েছিলেন। খুবসাধারণ জীবন যাপন করতেন