কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’

মেয়েটিকে এত নিখুঁতভাবে তৈরি করেছেন বিধাতা। কোত্থাও কোনো খুঁত রাখেননি। ফ্যানের বাতাসের দুরন্তপনায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে বুকের ওড়নাটি। মন্দ লাগছে না... ভি কার্ট কামিজে তার বুকের সৌন্দর্য পাগল করে তুলছে বাদলকে। নিঃশ্বাসের মৃদু দুলুনিতে মেয়েটির বুক দুটি বেশ লাগছে।

মাসির কড়া নাড়ার শব্দ কানে এলেও তা আমলে না নিয়ে বাদল তার পশুসুলভ আচরণে মেয়েটির শরীর ক্ষতবিক্ষত করে চললো। অন্যদিকে মাসি চিৎকার করে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে থাকলো।

দ্রুত সকালের নাশতা সেরে বাদল উঠে পড়ল টেবিল থেকে। হঠাৎই প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইলটি নির্লজ্জের মতো বেজে উঠলো। বাদল মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে তার চোখের সামনে তুলে ধরতেই তার নজর পড়ল মিতালীর উপর। মিতালী খাবারের টেবিলে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

ঘড়ির কাঁটাটা এমন বাজেভাবে সাউন্ড করে, শুনলেই বাদলের মেজাজ বিগড়ে যায়। ঘড়িতে অ্যালার্ম না দিয়েও উপায় নাই। আজকে সাতসকালে তাকে রওনা দিতে হবে চট্টগ্রাম। ঘড়ির অ্যালার্ম শুনেই বাদল ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে। বিছানায় বসে দু’পা ঝুলে রেখে আবলতাবল অনেক কিছু ভাবে।

হারামির বাচ্চা! তোর জন্য আমার জীবনটা শেষ করে দিলাম, তোর জন্য বাচ্চাদেরও ঠিকমতো দুধ খেতে দেইনি, তোকে কাছে পাবার জন্য কী না করেছি, তুই একটা জানোয়ার! তুই একটা কুকুর! তোরে কুকুর দিয়ে চোদানো উচিৎ... এরকম অশ্লীল খিস্তি-খেউর করা মিতালীর নিত্যদিনের কাজ।

দুইমাস পরের কথা। ১৩৬ নম্বর বনগ্রাম রোড সেজেছে নতুন সাজে। সারা বাড়ি মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিয়ের বিশাল একটা গেট করা হয়েছে। সারাবারিতে আনন্দের বন্যাধারা বয়ে চলছে। মাইকে জোরে জোরে বাজছে, আজা তুঝকো পুকারে মেরে গিত, ও মেরে মিতোয়া...

রাত প্রায় দুটো ছুঁই ছুঁই। পুষ্পবালা দেবী বুড়ো মানুষ, এত রাত জাগতে পারে না। কাস্টমার রাত ১২টার পরে আর অ্যালাও করে না। কিন্তু বাবু-হিরনের ব্যাপারটা ভিন্ন, আজ ওদের কারণেই নিশ্চিন্তে ব্যবসা করে দুপয়সা রোজগার করছে সে। সেকারণেই ওদের কোনো টাইম নাই। যতক্ষণ ইচ্ছা থাকতে পারে ওরা।

শুধু রুম ভাড়া দিয়ে চলছিল না ওর। সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে পুষ্পবালা দেবী নতুন একটা ব্যবসার সন্ধান পায় তার এক ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে। ভাড়াটিয়া ছোকড়া সিনেমায় নাচের মেয়ে সাপ্লাই দিতো। ও একদিন এসে পুষ্পবালা দেবীকে এই ব্যবসার বুদ্ধিটা দেয় এবং ঐ প্রথম কাস্টোমার নিয়ে আসে। ব্যবসাটা হলো মদের।