কাজী জহিরুল ইসলামের আত্মগদ্য ‘আমার বিচিত্র জীবন’

ওরা ছাদের কার্ণিশ ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। কতক্ষণ, সেটা ঘড়ি ধরে বলা যাবে না। তবে সেই সময়ের মধ্যে আবার আকাশে একফালি চাঁদ দেখা দিল। যে মেঘদল এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়েছিল; সেই মেঘদল সরে মৃদু মৃদু জোছনা নেমে এলো।

ওই বিকেলেই তুরফার সঙ্গে আমার খাতির হয়ে গেল। খাতির না হয়ে উপায় নেই। আমার কাছে পৃথিবীর শিশুদের চেয়ে প্রিয় আর কিছু নেই। ফুল নয়, পাখি নয়, নদী নয়, সমুদ্র নয়, পাহাড় নয়— শিশু।

দীপ মাস্টারবেডের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। পাশে একটা ছোট পার্ক। শিশুদের জন্য নির্মিত। অরক্ষিত। সকালে কিছু স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হাঁটে। এক্সারসাইজ করে। দুপুরে ভিক্ষুক, ভবঘুরের দল পার্কের বেঞ্চের দখল নেয়।

যখন ঘুম ভাঙল তখন মসজিদে মাগরিবের আজান হচ্ছে। নিতি চোখ মেলে চারপাশটা একবার তাকিয়ে দেখল। মশারি টাঙানো। গায়ে পাতলা চাদর দেয়া। এসি চলছে। ঘরের লাইট বন্ধ। পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরে হালকা আলো আসছে।

হঠাৎ দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে নিতি কেঁপে উঠল। মাথা ঘুরিয়ে দীপের দিকে হাঁ করে চেয়ে থকল। দীপ চোখেমুখে হাসছে। সে হাসির মধ্যে কেমন একটা নির্লজ্জ ভাব আছে। ভয় আছে। আতঙ্ক আছে। শঙ্কা আছে। আর আছে অবিশ্বাস।

কলেজে ভর্তি হয়েই ক্লাস করতে শুরু করলাম। গেট দিয়ে কলেজে ঢুকে হাতের ঠিক বাঁদিকে প্রিন্সিপল স্যারের দপ্তর এবং তার উপরে দ্বিতীয় তলায় আমাদের প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস।

আমার মাঝে মাঝে স্পষ্ট মনে হয়, কেউ আমাকে লিখছে। কোনও এক অদৃশ্য হাত। তাঁর লেখনিতে আমি যেভাবে বিকশিত হচ্ছি আমার লেখক সত্তাও সেভাবেই বিকশিত হচ্ছে।

৮০ সালের কথা। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছি। সারাক্ষণ খালে-বিলে-পুকুরে মাছ ধরছি। পরীক্ষার জন্য মাছ ধরার নেশাটা চেপে রেখেছিলাম অনেক দিন। এখন পরীক্ষা শেষ। আমাকে আর রুখে কে!